ভারতে প্রথম মে দিবস উদযাপন

আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদ প্রবাহ :: কোলকাতা ::    ১লা মে:-১৯২০ সালে ভারতে প্রথম কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠলেও আন্তর্জাতিক মে দিবসের অনুষ্ঠান তখনও ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠেনি। ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৩ সালের ১লা মে তারিখে মাদ্রাজের সমুদ্রসৈকতে শ্রমিক নেতা সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার এর সভাপতিত্বে।

হাতের কাছে লাল ঝান্ডা না থাকায় কমরেড চেট্টিয়ার নিজের কন্যার লাল শাড়ি ছিঁড়ে, তা দিয়ে লাল ঝান্ডা তৈরি করেছিলেন । ১লা মে, ১৯২৩ সিঙ্গারেভলু – র সভাপতিত্বে তৈরি হলো “লেবার কিষান পার্টি অফ হিন্দুস্তান( এ পার্টি অফ ওয়ার্কর্স অ্যান্ড পিজান্টস)”।

সেই দিনেই বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীর এই পবিত্র দিন টিকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানালো লেবার কিষান পার্টি। ঐতিহাসিক মে দিবস এর যে প্রেক্ষিত, তা রচিত হয়েছিল আমেরিকার শিকাগো শহরে ১৮৮৬ সালের ১ লা মে। ১৮৮৬ সালের মূল দাবি ছিল ৮ ঘণ্টা কাজের।

এই দাবি কোন একদিন হঠাৎ করে ওঠেনি । শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার বহু ছোটছোট দাবি দাওয়ার সমষ্টির ফলশ্রুতি ছিল ১৮৮৬ সালের বৃহৎ আন্দোলন ।

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে এক দিনের প্রথম ধর্মঘট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায় ১৮৫৬ সালের ২১ শে এপ্রিল। আর ভারতবর্ষে প্রথম ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে শিল্প শ্রমিকদের প্রথম ধর্মঘট ১৮৬২ সালের মে মাসে। হাওড়া স্টেশনে বারোশো রেল শ্রমিক দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ওই ধর্মঘটে সামিল হয়েছিল।

সে দিক থেকে হাওড়া রেল শ্রমিকদের ধর্মঘট টি দ্বিতীয় ধর্মঘট । ১৯২৩ সালে ভারতবর্ষে প্রথম মে দিবস পালন হল। ১৯২৬ সালে মুম্বাইতে শ্রমিকরা মে দিবস পালন করলেন এক বিশাল শোভাযাত্রা করে ।শোভাযাত্রার পুরোভাগে ছিলেন এম এন জোশী প্রমূখ। ১৯২৭ সালে সারা ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রদেশগুলোকে নির্দেশ পাঠানো হলো মে দিবস পালন করার জন্য। সেই নির্দেশ মেনে কলকাতা ,মুম্বাই, মাদ্রাজ সহ অন্যান্য রাজ্যের প্রধান শহরগুলিতে বিপুল উৎসাহের সঙ্গে মে দিবস পালিত হয়েছিল ।

১৯২৭ সালে গণবাণী পত্রিকার মে দিবস সংখ্যায় শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সঙ্গীত কে বাংলায় তরজমা করে প্রকাশ করেছিলেন কবি নজরুল ইসলাম – “অন্তর ন্যাশনাল সংগীত” নামে-…. “জাগো …জাগো অনশন বন্দী,ওঠো রে যত, জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত”।এই বছরেই বোম্বেতে মে দিবস পালিত হয়েছিল খুব উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে। ওই মিছিল থেকেই আওয়াজ উঠেছিল -আট ঘণ্টার বেশি খাটুনি নয়, সবেতন ছুটি দিতে হবে।

১৯২৮ সালে যখন সারা ভারতের শ্রমিক আন্দোলন উত্তাল হয়ে উঠেছে, সেই পরিস্থিতিতে কলকাতায় মে দিবস পালিত হয়েছিল শ্রদ্ধানন্দ পার্কে। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই কর্মসূচি বন্ধ করার যাবতীয় প্রচেষ্টা চালানো হলেও, শ্রমিকরা মে দিবস পালন করেছিলেন বিশাল বিশাল মিছিল এবং সমাবেশ এর মধ্যে দিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 5 =