কুমার পঙ্কজ :: সংবাদপ্রবাহ টিভি :: ৩রা,ফেব্রুয়ারি :: নয়াদিল্লি :: বন্দরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলনের মুখে অবশেষে ভারতের সঙ্গে বন্দর-টার্মিনাল গড়ার চুক্তি বাতিল করল শ্রীলঙ্কা। বন্দরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ চলছিল সেখানে। তাতেই শেষমেশ চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহিন্দা রাজাপক্ষ সরকার। ওই বন্দরে বিনিয়োগ করার কথা ছিল আদানি গ্রুপের।
২০১৯ সালে কলম্বো বন্দরের পূর্ব প্রান্তে একটি টার্মিনাল গড়তে ভারত এবং জাপানের সঙ্গে চুক্তি হয় শ্রীলঙ্কার। এর আওতায় টার্মিনালের ৪৯ শতাংশ মালিকানা ভারত ও জাপানের হাতে এবং বাকি ৫১ শতাংশ শ্রীলঙ্কার হাতে থাকবে বলে ঠিক হয়েছিল। ভারতের তরফে বিনিয়োগকারী ছিল আদানি গ্রুপ।
কিন্তু বন্দরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে সে দেশের ২৩টি শ্রমিক সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলি। ওই টার্মিনালের ১০০ শতাংশ মালিকানাই বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে রাখতে হবে বলে দাবি ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষকেও এগিয়ে আসতে হয়। তিনি জানান, সমুদ্রপথে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য কলম্বো হয়ে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হয়। চুক্তি বাতিল হলে, তাতে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
কিন্তু প্রেসিডেন্টের বার্তাও টলাতে পারেনি বিক্ষোভকারীদের। বরং দেশের সাধারণ মানুষও তাতে যোগ দেন। শুধু তাই নয়, রাজাপক্ষ সরকারের অনেক মন্ত্রী-আমলাও এই বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হন। তাতেই চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা সরকার।
শ্রীলঙ্কার এই সিদ্ধান্তে কূটনীতিগতভাবেও ভারত বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। ভারত মহাসাগরে শ্রীলঙ্কার উপস্থিতি বরাবরই ভরসার জায়গা দিল্লির কাছে। বিশেষত চীন যখন সেখানে আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা চালাচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় ইতিমধ্যেই হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে চীন। সেখানে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, বন্দর-শহর, জাতীয় সড়ক এবং বিদ্যুৎ বণ্টন কেন্দ্র গড়তে প্রচুর অর্থ ঢেলেছে তারা।
রাজাপক্ষ সরকারকে মোটা টাকার ঋণও দিয়েছে চীন। এই ঋণের পরিমাণ এতটাই যে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে তা রাজাপক্ষ সরকারের পক্ষে শোধ করা কার্যত অসম্ভব। সম্প্রতি তার নিদর্শনও মিলেছে। ঋণ শোধ করতে না পেরে ২০১৭ সালে সেখানকার একটি বন্দর বেজিংয়ের এক সংস্থাকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে বাধ্য হয় কলম্বো।
তবে এই চুক্তি বাতিল করলেও কলম্বো বন্দরের পশ্চিমে আরেকটি টার্মিনাল উন্নয়ন প্রকল্পে ভারত এবং জাপানকে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।