নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: দুর্গাপুর :: বৃহস্পতিবার ২৫,মে :: ইচ্ছা আর মনের জোর থাকলে সবকিছুই সম্ভব, আরো একবার প্রমাণ করে দিলেন লতিকা এবং সৌরভ। মা এবং ছেলে একসঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে পাস করে সকলের নজর কাড়লেন। উচ্চ মাধ্যমিকের মায়ের প্রাপ্ত নম্বর ৩২৪ এবং ছেলের প্রাপ্য নম্বর ২৮৪। ৪০ নম্বর বেশি পেয়ে মায়ের ক্ষোভ ছেলে যদি আমার থেকে বেশি নাম্বার পেত তাহলে ভালো হতো।
নদীয়ার শান্তিপুর থানার নৃসিংহপুর নতুন সরদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা লতিকা মন্ডল। বর্তমানে তার দুই মেয়ে একটি ছেলে। মেয়ে কলেজ ছাত্রী। লতিকা মন্ডলের বর্তমান বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। ছোট থেকেই আশা ছিল কলেজের গন্ডি পার করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার। আর্থিক অনটন এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে তারপর পড়াশোনা ছেড়েই দিতে হয়েছে বাধ্য হয়ে।
এরপরে হাজারো চেষ্টা করেও সে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। বড় মেয়ে এখন কলেজের গণ্ডিতে পা দিয়েছে। লতিকার নতুন করে ইচ্ছা জাগে পড়াশোনা করার এর পরেই প্রতিবেশীর সাহায্যে সে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় মাধ্যমিকে ভর্তি হন। ঠিক সেই সময় তার ছেলে সৌরভ মন্ডলও মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
এরপরই মাধ্যমিকের গন্ডি পার হয়ে লতিকা মন্ডল ভর্তি হন নৃসিংহপুর উচ্চ বিদ্যালয়। ছেলে সৌরভ মন্ডল তখন মাধ্যমিকে কালনা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। যেহেতু তারা একই ক্লাসে পড়ে সেই কারণে একই সঙ্গে বাড়িতে পড়াশোনা করতে বসতো।
নিজের সংসার সামলে পাশাপাশি প্রতিবেশী মানুষের বিভিন্ন কটুক্তি সহ্য করেও পড়াশোনা চালিয়ে যেত সৌরভ এবং লতিকা। গতকাল উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পর ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পারে ছেলে এবং মা দুজনেই পাস করেছে। তবে মালতিকা মন্ডল ছেলে থেকে ৪০ নাম্বার বেশি পেয়েছে।
এ বিষয়ে লতিকা মন্ডল বলেন, আমি ছেলের মুখ থেকে জানতে পারি যে আমরা দুজনেই পাস করেছি। তবে আমি ৩২৪ নাম্বার পেয়েছি। আর ছেলে ২৮৪ নাম্বার পেয়েছে। আমি যে চল্লিশ নাম্বার বেশি পেয়েছি সেটা ছেলে বেশি পেলেই হয়তো ভালো হতো এবং আমি খুশি হতাম। আগামী দিনে আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান বলেই দাবি করেছেন লতিকা মন্ডল।
