সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: দক্ষিণ ২৪ পরগনা :: রবিবার ৪,জুন :: ছোট থেকে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। বয়স বাড়লেও তাঁদের সম্পর্কে ছেদ পড়েনি। তিন ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল মিলেমিশে সংসারের উন্নতি করা। লক্ষ্য ছিল নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে সকলের মুখে হাসি ফোটানো। তাই একসঙ্গে তাঁরা ভিনরাজ্যে কাজ করতে যেতেন। এবারও অন্ধ্রপ্রদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা বদলে দিয়েছে সব কিছু । প্রাণ হারালেন তিন ভাইই একসঙ্গে।
একই পরিবারের তিন সদস্য-সহ পাঁচজনের মৃত্যুতে শোকে ভাসছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী । হারান গায়েন, নিশিকান্ত গায়েন, দিবাকর গায়েন সম্পর্কে একে অপরের ভাই। তাঁরা সকলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর বাসিন্দা। অন্ধ্রপ্রদেশে ধান রোয়ার কাজে যাচ্ছিলেন। যদিও এই প্রথমবার নয়। এর আগেও একাধিকবার ভিনরাজ্যে গিয়েছিলেন তিনজন।
কিন্তু শুক্রবার ঘটল বিপত্তি। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে তাঁদের। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী-সহ অন্যান্যরা । কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সকলেই । নিথর দেহ এসে পৌঁছয় বাড়িতে । আর তার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন গোটা পরিবার । ওই তিন ভাই ছাড়াও বাসন্তীর ছরানেখালি গ্রামের আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
তাঁরা হলেন বিকাশ ও সঞ্জয় হালদার। বাসন্তীর পাশাপাশি মগরাহাট ১ নম্বর ব্লকের উস্তির সরিষাপাড়ার বাসিন্দা বছর একুশের আশিক আলি গাজিরও মৃত্যু হয়েছে। তিনি দর্জির কাজ করতেন। মৃত্যু হয়েছে কাকদীপের দু’জনের । বারুইপুর এর ধপধপির সৌরভ রায় ও জয়নগরের সরবেড়িয়ার সঞ্জীব মন্ডলেও মৃত্যু হয় ওই দুর্ঘটনায় ।
সৌরভ ক্যাটারিং এর জন্য ও সঞ্জীব দিন মজুরের জন্য কাজের উদ্দ্যেশে রওনা দিয়েছিলেন । এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় এখনো পর্যন্ত গোটা জেলাতে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। গুরুতর জখম অবস্থা হাসপাতালে ভর্তি ১o৫ জন।জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার নিখোঁজ হয়েছেন ৪১ জন । প্রশাসনের তরফ থেকে নিরাপদে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ৩০ জনকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে বিষাদের সুর।