কাঁকুলিয়ার জোড়া খুনে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর মিঠুকে গ্রেফতার করলো কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা

সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: বারুইপুর :: গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়ার জোড়া খুনের ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লালবাজার ডায়মন্ড হারবার থানা এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল । বুধবার ডায়মন্ডহারবারের ভাড়া বাড়ি থেকে মিঠু হালদারকে আটক করে লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় হোমিসাইড শাখার পুলিশ। ম্যারাথন জেরার পর মিঠুকে গ্রেফতার করে হোমিসাইড বিভাগের পুলিশ । ধৃতকে বৃহস্পতিবার আলিপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে। এই খুনের ঘটনায় এক বা একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে করছে গোয়েন্দারা।

পুলিশ সূত্রে খবর, ডায়মন্ড হারবারের মিঠু পরিচারিকা ও আয়ার কাজ করতো । সুবীরবাবু যখন কর্মসূত্রে কলকাতার বাইরে থাকতেন, তখন তার মায়ের দেখভাল করত মিঠু। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা মনে করছে সুবীরবাবু এবং গাড়ির চালক রবীন খুনের ঘটনায় মিঠুর সরাসরি যোগ আছে। শুধু তাই নয় মিঠু সহ তার ছেলে এবং ছেলের তিন বন্ধুর ভূমিকাকেও আতশকাচের তলায় রাখছে গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দাদের অনুমান কাঁকুলিয়া রোডের ওই বাড়ি বিক্রির প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল মিঠুর ছেলেও। বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা নিয়ে আসত সে । গোয়েন্দাদের ধারণা, সম্ভবত বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত কোনও চুক্তি নিয়ে মিঠুর ছেলের সঙ্গে সুবীরবাবুর বিবাদ হয়। সেই কারণেই খুন কিনা তাও খতিয়ে দেখছে।অন্য দিকে, লালবাজারে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে কাঁকুলিয়া রোড এলাকার বাড়ি বিক্রির সাথে যুক্ত কয়েকজন দালালরাও।

বাড়ি বিক্রি সংক্রান্ত কোনও গোলমালে জোড়া খুন কিনা তা দালালদের জেরা করে জানার চেষ্টা করছে গোয়েন্দারা। মিঠু হালদার ডায়মন্ড হারবার পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নইয়াপাড়াতে ভাড়া বাড়িতে একাই থাকত। অন্যদিকে ডায়মন্ডহারবারে কপাটহাট এর কাছে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকত মিঠুর ছোট ছেলে বিলাস হালদার ও মিঠুর ভাই তরুণ হালদার।অনুসন্ধানের সময় দেখা গিয়েছিল বালিগঞ্জ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশ কুকুর। সেই থেকে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়, খুনের পর সম্ভবত বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে পালিয়েছে আততায়ী। সেই সূত্রে শুরু হয় তল্লাশি।ঘটনাচক্রে মিঠু হালদারও শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা দিয়েই দৈনিক যাতায়াত করে । এর পরই ওই মহিলাকে ডায়মন্ড হারবার থানায় ডেকে পাঠানো হয়।

ডায়মন্ড হারবার পুলিশ সূত্রে খবর, ২০২০ সালে ডায়মন্ড হারবারের ভগবানপুর এর কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতো মিঠুর পরিবার। পারিবারিক বচসার জেরে মিঠু ও তার বড় ছেলে মিলে তার স্বামীকে হত্যা করার পরিকল্পনা তৈরি করে। পরিকল্পনা স্বামীকে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে মুখে সেলোটেপ আটকে দিয়ে প্রাণে মারার চেষ্টা করে মিঠু ও তার বড় ছেলে। কিন্তু প্রতিবেশীদের প্রচেষ্টায় মরণাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তার স্বামীকে। এই ঘটনায় মিঠুকে গ্রেপ্তার করেছিল ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছে মিঠু ও তার বড় ছেলে।

সুবীর চাকীর সঙ্গেই খুন হয়েছিল তার গাড়ি চালকও। বুধবার মৃত রবীন মণ্ডলের মোমিনপুরের বাড়িতেও যায় লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তারা। কয়েকদিন আগে মিঠুর ছোট ছেলে বিলাস ও ভাই তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল লালবাজারে। মঙ্গলবার রাতে লালবাজারে গোয়েন্দারা সন্ধান পায় মিঠু ভাড়াবাড়ির । তারপর ভাড়াবাড়ি থেকে মিঠুকে আটক করে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ ও লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা। মিঠুর ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়, একটি পেন ড্রাইভ ও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি।

পম্পা গায়েন বাড়ির মালকিন তিনি বলেন, মাস দুয়েক আগে এই বাড়িতে থাকার জন্য বাড়ি ভাড়া নেয় মিঠু। মিঠু পেশা হিসেবে বলে সে কলকাতার একটি বাড়িতে আয়ার কাজ করে। বাড়িতে বেশ রাত করেই আসতো । সম্প্রতি দশমীর দিন বাড়ির উঠানে কলে রক্তমাখা কাপড় কাচতে দেখে কৌতূহলবশত পম্পা জিজ্ঞাসা করে বসে রক্তের বিষয়ে । পম্পার প্রশ্নের উত্তরে বলে ছোট ছেলে দশমীর সময় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে সেই জন্যই এই কাপড় এ রক্ত তাই পরিষ্কার করছে। মিঠুর গ্রেপ্তারের পর আতঙ্কিত প্রতিবেশীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − one =