দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকায় এ্যানা ফ্র্যাঙ্ক এর ডায়েরি

সুদেষ্ণা মন্ডল / সজল দাশগুপ্ত :: সংবাদ প্রবাহ :: কোলকাতা   :: বুধবার ২০,ডিসেম্বর ::  একটি মেয়েবাড়ীর পিছনে  চিলেকোঠায় লুকিয়ে ছিলো ।  বেশীদিন না । মাত্র ৭৬১ দিন। ২৫ মাস, অর্থাৎ দুই বছরের একটু বেশী। যেখানে লুকিয়ে ছিলো সেই  জায়গাটার আয়তন ৪৫০ বর্গফুট। আর ওইটুকু জায়গায় মেয়েটি সহ মোট ছিলো আটজন।
দুই বছর সময় কালে  ওই জায়গাতেই থাকতো তারা, ঘুম থেকে ওঠা, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া , সামান্য কিছু খাওয়া । ওইখানেই সকাল-সন্ধ্যে-রাত দেখা। বাইরে সারা শহরে নাৎসি বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ।গেস্টাপো ঘুরে বেড়াচ্ছে । উপরে আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ হচ্ছে। ধরা পড়লেই শেষ।
আর আমাদের মতো হাতে সেলফোন? সেলফোনে সারা বিশ্ব দেখা? ইন্টারনেট? ল্যাপটপ? স্কাইপি, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও চ্যাট? ১৯৪২ সালে স্বপ্নেও কেউ ভাবেনি ওসবের কথা। তাহলে কি ভাবে  সময় কাটানো? মেয়েটি ডায়েরি লিখতো প্রতিদিন। মাত্র ১৫ বছরের মেয়েটি প্রতিদিন লিখেছে ডায়েরি। লিখেছে নিজেরা কথা, তার বাবা মায়ের কথা। লিখেছে তার শরীর কীভাবে বদলে যাচ্ছে সেই সব বর্ণনাও।  লিখে গেছে সব কথা।
সে লিখেছে– কী সাংঘাতিক কথা ১৫ বছরের মেয়ের। মানুষের ধৈর্য নেই, কিন্তু কাগজের আছে। মানুষ আরেক মানুষের আদর্শ, ধর্মবিশ্বাস এসবের সম্মান দেয়না, কিন্তু কাগজ দেয়। মেয়েটি তাই কাগজকেই বলে সব কথা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কোনোও এক বিশ্বাসঘাতক তাদের ধরিয়ে দেয়। পরিবারের আটজনের অনেককেই মেরে ফেলা হয়। এই মেয়েটি আর তার বড় বোন টাইফাস জ্বরে মারা যায় নির্যাতন ক্যাম্পেই। শুধুমাত্র মেয়েটির বাবা বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন।
মেয়েটি এত কিছু হয়ে যাওয়ার  পরেও আনন্দ, সৌন্দর্য, মানুষের মহত্ত্ব এসবের উপর বিশ্বাস হারায়নি। মেয়েটি যেই  সব কথা লিখেছিলো তার থেকে কয়েকটি প্রিয় উদ্ধৃতি ‘ভাবলে ব্যাপারটা কতো চমৎকার যে, আসলে পৃথিবী বদলে দেবার জন্য কারও এক মুহূর্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই’। ‘চারিদিকের যেসব সৌন্দর্য এখনও বাকী আছে তা দেখো আর আনন্দিত হও’। ‘আমি লিখতে শুরু করলেই সব ঝেড়ে ফেলতে পারি। আমার দুঃখ দূর হয়ে যায়, আমার সাহস ফিরে আসে’।
‘আমি দেখেছি সৌন্দর্য কোথাও না কোথাও শেষমেশ থাকেই। প্রকৃতিতে, সূর্যালোকে, স্বাধীনতায়, নিজের ভেতরে। আর এই সৌন্দর্যগুলো তোমাকে সাহায্য করবেই’। ‘সবকিছুর পরেও আমি বিশ্বাস করি যে, মানুষ তার ভেতরে সত্যিই ভালো’।
মেয়েটির লেখায় বারবার ‘যতোটুকু সৌন্দর্য বাকী আছে’ এ কথা কেনো বলেছে তা বোঝা যাবে দ্বিতীয় ছবিতে। চিলেকোঠার জানালাটা গাঢ় রঙের পর্দা দিয়ে ঢাকাই থাকত, কিন্তু বাইরে বোমাবিধ্বস্ত শহরের চেহারা তখন এমনই।  মেয়েটির নাম হলো এ্যানা ফ্র্যাঙ্ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =