প্রাচীনত্ব, ঐতিহ্যের দিক থেকে মালদার গোবরজনা কালীপূজা জেলার প্রথম সারিতেই স্থান পায় ।

কুমার মাধব :: সংবাদ প্রবাহ :: মালদা :: দিনকয়েক পরই দীপাবলি। আলোর দ্বীপ জ্বালিয়ে বাঙালি প্রস্তুত দেবীর আরেক রূপের আরোধনাই। প্রাচীনত্ব, ঐতিহ্যের দিক থেকে মালদার গোবরজনা কালীপূজা জেলার প্রথম সারিতেই স্থান। জেলাবাসীর কাছে ‘গোবরজনা কালীপূজা’ নামে পরিচিত এই কালী পুজো।জেলার অন্যতম ঐতিহ্যপূর্ণ কালীপূজা এটি।

মালদা সদর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পুখুরিয়া থানার অন্তগর্ত আরাইডাঙ্গা গ্রামপঞ্চায়তের গোবরজনা গ্রাম। সেখানেই অবস্থিত মায়ের স্থাপিত কালীমন্দির। প্রতিবছর ভক্তি নিষ্ঠার সাথে পূজা হয়ে আসছে। প্রতিবছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক ভক্তেরা এই পুজোয় ভিড় জমায়।মায়ের মন্দির সংলগ্ন কালিদ্রি নদীর তীরে বিশাল মেলা বসে পূজার কটা দিন। তবে এবছর করোনা আবহে পূজো পরিচালনাতে সমস্ত রকম প্রশাসনিক নির্দেশিকা রয়েছে।

এলাকার প্রবীণদের মুখে জানা যায়, গোবরজনা কালীপূজা ডাকাতদের হাতে সৃষ্টি।ডাকাতেরা শক্তির আরোধনাই মা কালীর পুজো এলাকায় আরম্ভ করে। প্রায় ৩৫০ বছর ধরে এই ডাকাতের হাতে সৃষ্ট এই পুজো আজও একই রীতি, নীতি, মেনে হয়ে আসছে।পুখুরিয়া, আরাইডাঙ্গা এলাকায় সমগ্র এলাকা ঘনজঙ্গলে ঢাকা ছিল।

সেসময় ঘনজঙ্গলে হিংস্র পশুও বাস করত। তাই মানুষের আনাগোনাও এলাকায় কম ছিল। সেই সুযোগে বিহার থেকে একদল রাজপুত নদীপথে এসে এই জায়গায় বসবাস শুরু করে। এই রাজপুত মানুষদের পেশায় ছিল ডাকাতি করা। এখান থেকেই বিভিন্ন প্রান্তে ডাকাতি চালাত। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ও ডাকাতি করে ফিরে এসে শক্তির আরোধনার জন্য মা কালীর পুজো করতেন ডাকাতরা। কার্তিক মাসে ডাকাতেরা নিজেরাই মায়ের প্রতিমা তৈরি করে পুজো করত। আর এই থেকেই পুজো একই মতো হয়ে আসছে।

বর্তমানে নেই জঙ্গল, নেই ডাকাত। গড়ে উঠেছে ছোট ছোট গ্রাম। এলাকার এক চৌধুরী পরিবার বংশপরম্পরায় এই পুজো চালিয়ে আসছে। স্থানীয় জ্যোতিষ চৌধুরীর পরিবারের বংশধররা বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্ব থাকলেও এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসন সমগ্র দায়িত্ব ভার সামলে থাকেন। এই পুজোতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতা করে এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। পুজোর কটা দিন মায়ের আরাধনা মত্ত থাকে গোটা এলাকা।বর্তমানে জ্যোতিষ চৌধুরীর পৌত্ররা বংশ পালা করে এই পুজো পরিচালনা করে আসছে।চৌধুরী প্রতিবারের দানের দেড় বিঘা জমির উপর মায়ের স্থাপিত মন্দির রয়েছে।

চৌধুরী পরিবারের এক সদস্য শান্তি চৌধুরী জানান,”জেলার প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠ পুজোর মধ্যে অন্যতম এই পুজো। এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় এই পুজো, মেলা, বলি, নিরঞ্জন সমগ্রই শান্তিপূর্ণ সম্পন্ন হয়ে থাকে। যথাযথ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন।মায়ের প্রচুর অলংকার রয়েছে। পুজোয় প্রচুর দান করে মানুষ। তাই পুজোর বাজেটে অসুবিধে হয়না। প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই একই মতো পুজো হয়ে আসছে আজও। এত বড় পুজো সাথে মেলা তাই পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে এই পুজোকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয় গোটা এলাকাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =