উদয় ঘোষ :: সংবাদ প্রবাহ :: বর্ধমান :: হাওড়ার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলকে খুনের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে রায়না থানার পুলিস। ধৃতদের নাম জনিসর আলম ওরফে রিকি ও মহম্মদ সাদ্দাম। কলকাতার নারকেলডাঙা থানা এলাকায় রিকির বাড়ি। খুনের ঘটনার পর সে আনন্দপুরে ডেরা বেঁধেছিল। সেখান থেকেই তাকে আটক করে পুলিস।
তার আগে অবশ্য সাদ্দামকে ধরে পুলিস। শনিবার দু’জনকে ধরে রায়না থানায় নিয়ে আসা হয়। টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা সব্যসাচীকে খুনের কথা কবুল করে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিস জেনেছে, পারিবারিক বিবাদের জেরেই সব্যসাচীকে খুন হতে হয়েছে। তাঁকে খুনের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা সুপারি দেওয়া হয়েছে রিকিকে। রিকি কলকাতার বড়বাজারে সিসি ক্যামেরার কারবার করে। টাকার লোভেই সে সব্যসাচীকে খুন করতে রাজি হয়।
ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত বলে পুলিস জেনেছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। জেলার পুলিস সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ধৃতদের সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। রায়না থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, শনাক্তকরণের জন্য আদালতে ধৃতদের টিআই প্যারেডের আবেদন জানানো হবে।গত ২২ অক্টোবর রায়না থানার দেরিয়াপুরের বাড়িতে খুন হন সব্যসাচী। তাঁর বাবা দেবকুমার মণ্ডল খুনের ঘটনায় ছোট ভাই ও তাঁর পরিবারের কয়েকজনের বিরুদ্ধে সুপারি কিলার নিয়োগ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিস। তদন্তে নেমে প্রাথমিকভাবে কোনও ক্লু মিলছিল না। সব্যসাচীর সঙ্গে আসা তাঁর বন্ধু, গাড়ির চালক ও রাঁধুনিকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেও তেমন কোনও তথ্য পায়নি পুলিস। শেষমেশ এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ভরসা করে পুলিস। তাতেই কেল্লাফতে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজই সব্যসাচীকে খুনে ব্যবহৃত গাড়ির হদিশ দেয়। পুলিস জামালপুরের হরেকৃষ্ণ সেতু, পালসিট ও ডানকুনি টোলপ্লাজা এবং মশাগ্রামের একটি দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতে দুপুরে সব্যসাচীর গাড়িটিকে হরেকৃষ্ণ সেতু পার হতে দেখা যায়। এরপর রাত পৌনে ৯টা নাগাদ একটি গাড়িকে সেতু পার না হয়ে রায়নার দিকে যেতে দেখা যায়।
সেই গাড়িটির নম্বরের সূত্র ধরে পুলিস সাদ্দামের হদিশ পায়। সে গাড়িটি কিছুদিন আগে কিনেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনে রিকি সহ আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে পুলিস। খুনিরা পিছনের রাস্তা দিয়ে গ্রামে ঢুকেছিল। সব্যসাচীর বাড়ির কিছুটা দূরে তারা গাড়ি দাঁড় করায়। সব্যসাচী সামনে এলে রিকি তাকে গুলি চালায়। বাকিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপায়।
ময়নাতদন্তের রিপোের্ট সব্যসাচীর হাতে গুলির আঘাত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনায় দু’জন ধরা পড়লেও এখনই এর পিছনে পারিবারিক বিবাদ রয়েছে বলে নিশ্চিত নয় পুলিস। ঘটনায় বাকি জড়িতরা ধরা পড়লে আসল ঘটনা জানা সম্ভব হবে বলে মনে করছে পুলিস। তবে, সুপারি কিলারের তত্ত্বে শিলমোহর দিচ্ছে পুলিস। কিন্তু, কে সুপারি কিলার নিয়োগ করেছিল তার উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়।