নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: বর্ধমান :: সোমবার ৮,জুলাই :: পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার অন্তর্গত কুলীন গ্রাম । প্রাচীন কাল থেকে এখানে হয়ে আসছে রথযাত্রা উৎসব। জানা যায় এই গ্রাম থেকে রথের দড়ি গেলে তবেই পুরীর জগন্নাথ ধামের রথের দড়িতে টান পড়তো। এখনো নাকি এই গ্রামের রথের দড়ির টান শুরু হওয়ার পরে জগন্নাথ ধামের রথযাত্রা শুরু হয়.।
কুলীন গ্রাম, বাংলার দ্বিতীয় প্রাচীন রথযাত্রার সাক্ষী এই গ্রাম। এই গ্রামে বসেই শ্রীমদ্ভাগবত ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অবলম্বনে মালাধর বসু লিখেছিলেন শ্রীকৃষ্ণবিজয়। সে পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের কথা। বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের আবুজহাটি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কুলীন গ্রাম, ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ রচয়িতার গ্রাম। মালাধর বসুর পৌত্র রামানন্দ ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তরঙ্গ পার্ষদ।
বসু পরিবারের আমন্ত্রণেই কুলীনগ্রামে এসে তিন দিন ছিলেন মহাপ্রভু। চৈতন্যমঙ্গলে তার উল্লেখ রয়েছে। তখন থেকেই কুলীন গ্রামে রথযাত্রার শুরু। পুরীর রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কুলীন গ্রাম। কুলীন গ্রাম থেকে পুরীতে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রায় পট্টডোরি পাঠানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। পট্টডোরি হল তুলোর উপর নানা রঙের রেশম সুতো দিয়ে পাকানো কাছি।
যা দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথের সঙ্গে বাঁধা হত। মালার মতো গলায় পরানো হয়। প্রায় তিনশো বছর ধরে এই প্রথা চলেছিল। রশির একাংশ খামে করে পুরীর মন্দিরে পাঠাতেন কুলীন গ্রামের জগন্নাথ মন্দিরের কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে এই প্রথায় ছেদ পড়ে।কুলীন গ্রামে রয়েছে জগন্নাথ দেবের মন্দির। আজও প্রথা মেনে নিমকাঠ দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি নির্মাণ করা হয়।
রথ যাত্রা উৎসবের আগে দারু বিগ্রহগুলিকে নতুন রঙে সাজানো হয়। সুসজ্জিত রথে তিন দেবতাকে বসানো হয়। প্রায় ৩০ ফুট উচ্চ রথটি শাল, সেগুন ও নিম কাঠ দিয়ে তৈরি। আনুমানিক ৫০০ বছরেরও বেশি আগে মালাধর বসুর পৌত্র লক্ষ্মীকান্ত বসু কুলীনগ্রামে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার বহুকাল পরে কুলীনগ্রামে শুরু হয়েছিল রথযাত্রার উৎসব।