শ্রীনগরের হায়দরপোরা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরব হওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার মেহবুবা নিজেই টুইট করে এ কথা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর দলের দুই নেতা সুহেল বুখারি ও নাজমু সাকিবকে। মেহবুবা টুইটের সঙ্গে তাঁর বাড়ির বাইরের ছবিও পোস্ট করেছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে তালাবদ্ধ সদরের বাইরে পুলিশের গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে।
মেহবুবার গৃহবন্দিত্ব নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে যে ঘটনার প্রতিবাদে মেহবুবা মুখর, সেই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা আজ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, হায়দরপোরার পুলিশি সংঘর্ষের ঘটনা ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত হবে নিরপেক্ষ। ন্যায়বিচার হবে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তি পাবে।
শ্রীনগরের হায়দরপোরায় সংঘর্ষের ঘটনাটি সোমবার রাতের। সেখানে এক বাণিজ্যিক-ব্যবসায়িক কেন্দ্রে চার জঙ্গিকে মারা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি জানায়। সরকারের দাবি, নিহতদের মধ্যে একজন পাকিস্তানি। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন হলেন সেখানকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, চতুর্থজনের বাবা আবদুল লতিফ স্থানীয় জঙ্গিবিরোধী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য।
সেনার প্রশংসাপত্রও তাঁর আছে। তাঁর দাবি, তাঁর পুত্র আমির ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্রে এক দোকানে কাজ করতেন। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাঁর বিন্দুমাত্র যোগ ছিল না। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘জঙ্গিবিরোধী পরিবার বলে পরিচিতি পেয়েও আমার ছেলেকে জঙ্গি অপবাদ দিয়ে মারা হলো!’ অন্য দুই নিহত ব্যক্তি ব্যবসায়ী ও চিকিৎসক হিসেবে এলাকায় বিশেষ পরিচিত।
একজন ওই বাণিজ্যিক ভবনের মালিক আলতাফ বাট। অন্যজন দন্ত চিকিৎসক মুদাসির গুল। তিনি ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্রে এক কম্পিউটার সেন্টারও চালাতেন। পুলিশের দাবি, আলতাফ ও গুল দুজনেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুক্ত। নিহত পাকিস্তানি জঙ্গি হায়দর ও তাঁর সঙ্গী আমিরকে থাকার জন্য মুদাসির গুল ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্রে ঘরের বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। আলতাফ বাটের কিশোরী কন্যা পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিল কেন তার বাবাকে মারা হলো।
চারজনের নিহত হওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার পর ওই এলাকায় সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের দাবি, সংঘর্ষের পুরো ঘটনাই সাজানো। প্রতিবাদ জানান দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লা। তাঁরা বলেন, ওই ঘটনা নির্ভেজাল ‘সাজানো হত্যা’। পুলিশ নিহত চারজনের লাশ পরিবারের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে। অভিযোগ, প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে কোনোভাবে তাঁদের দাফন করা হয়। কাউকে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি।