কালের নিয়মে সবকিছুই অবলুপ্তির পথে, তবুও এতটুকু গরিমা হারায়নি বারুইপুরের রাসমেলা ।।

সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: বারুইপুর :: জমিদার নেই , নেই জমিদারী তাই হয়তো তেমন ভাবে নেই আলোর রোশনাই , আতশবাজির দাপাদাপি । কালের নিয়মে হয়তো একটু মলিনতা এসেছে কিন্তু এতটুকুও গরিমা হারায়নি বারুইপুরের বিখ্যাত রাসমেলা ।দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর রাসমাঠ লাগোয়া রায়চৌধুরীদের বিরাট মহল আজও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাজারো ইতিহাসের সাক্ষী নিয়ে ।

মদন মাল্য ছিলেন জমিদার । এরপর ইংরেজদের থেকে রায়চৌধুরী খেতাব পাওয়ার পর বৃদ্ধি পায় তাঁর জমিদারী । অবিভক্ত বাংলার বারো ভূঁইঞার মধ্যে নিজের জায়গা করে নেন তিনি । অধুনা বালিগঞ্জ থেকে রাঢ় সুন্দরবন সহ সুদূর গঙ্গাসাগর পর্যন্ত তার জমিদারী বিস্তৃত হয় । আর জমিদারী আদবকায়দায় পালিত হতে থাকে বারো মাসে তের পার্বণ । যার মধ্যে অন্যতম দুর্গা পূজা , রথযাত্রা , রাসযাত্রা ।

রাস পূর্ণিমাতে জমিদার বাড়ির ভিতর থেকে রাধা মাধবকে বিশেষ ব্যবস্থার সাথে নিয়ে আসা হয় রাসমাঠের বেদীতে । এর পর সারারাত ধরে চলে পূজা । একসময় পোড়ানো হয় প্রচুর আতশবাজি । এই বিশেষ দিনে থেকে বসে বিরাট মেলা । কি নেই গাছ , বাদাম , খই , মিষ্টি , ফুচকা , ঘুগনি , লোহার দোকান থেকে সাজুগুজু ও খেলনার দোকান ।

এই মেলা চলে প্রায় একমাস ধরে । এই মেলায় শুধু আশেপাশের মানুষজন নয় জয়নগর , কুলতলি , ক্যানিং , বাসন্তী , সোনারপুর সহ বিভিন্ন এলাকার প্রচুর মানুষ জন । বহু বছর আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মেলায় আসা মানুষজন এর জন্য জমিদার বাড়িতে থাকার বন্দোবস্ত হত । তাদের জন্য ব্যবস্থা হয় পুতুল নাচ ও যাত্রার । যা চলতো রাতভোর ।

আজ ক্লান্ত , জীর্ণ শরীরে বয়সের ভারে দাঁড়িয়ে রয়েছে সিংহদুয়ার মাথা না ঝুকিয়ে স্বগরিমায় । সব কিছু থাকলেও হয়তো সেই নিয়ম কানুনে কিছুটা ভাঁটা পড়েছে । সেই সারারাত ধরে চলা সব কিছুতে এখন দাঁড়ি পড়েছে । কিন্তু প্রাচীন নিয়ম নীতিতে কোথাও নেই মলিনতা । কয়েক শতক ধরেই এই রাসমেলা বয়ে নিয়ে চলেছে আভিজাত্যের বোঝা ।

প্রায় চার দশক এর বেশি সময় ধরে এই মেলাকে আরো উজ্জ্বল করেছে সার্কাস । সার্কাসের কারণে বেশ গমগমে থাকে গোটা মেলা । নিয়মের বেড়া জালে পশু পাখির খেলা দেখানো বন্ধ হওয়ায় কিছুটা চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল সার্কাস এর কর্তাদের কপালে । কিন্তু তা পূরণ হয়ে গিয়েছে নতুন নতুন কৌশলের খেলায় । এবছরও বসেছে সার্কাস ।

সার্কাস মালিক বুদ্ধদেব জানা জানান , বারুইপুর রাসমেলার অন্যতম আকর্ষণ সার্কাস । সার্কসকে ঘিরে এলাকার মানুষের মধ্যে তৈরি হয় ব্যাপক উন্মাদনা । করোনার কারণে বিগত দুবছর সব কিছু বন্ধ ছিল । খুব খারাপ পরিস্তিতির মধ্যে চলতে হয়েছে । এবছর ছাড়পত্র মেলায় আবারও বারুইপুরে তাঁবু ফেলা হয়েছে । জীব জন্তু না থাকলেও নতুন নতুন কৌশলের খেলায় এলাকার মানুষের মন জয় করবে এই রোলেক্স সার্কাস ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × five =