নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: ঝাড়গ্রাম :: ঠিকমত কথা বলতে পারে না , জানে না বাড়ির ঠিকানা । মূক ও বধির এক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে শুক্রবার সকালে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় ঝাড়গ্রাম শহরের জামদা এলাকায় । পথচলতি মানুষকে বকাঝকা করতে দেখা যায় ওই কিশোরকে ।
এই ঘটনায় অনেকে একটু ভয় পেয়ে যায় । রাস্তার উপর দিয়ে ছুটে চলা বাস দেখলেই তা থামানোর জন্য চিৎকার করতে থাকে । জামদা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা ওই কিশোরের এই আচরণ দেখে বুঝতে পারে ওই কিশোরের কিছু সমস্যা রয়েছে ।
জামদা এলাকার কিছু বাসিন্দা ওই কিশোরকে জামদা হরি মঞ্চ এর উল্টোদিকে একটি চায়ের দোকানে বসিয়ে তাঁর জন্য চা ও পাউরুটি খাওয়ায় । ওই কিশোর চিৎকার করে মানুষকে কিছু বলার চেষ্টা করছিল কিন্তু কেউ তাঁর কথা বুঝতে পারছিল না অনেকেই । ভাবল হয়তো লেখাপড়া জানে কলম খাতা বাড়িয়ে দেয়া হলে সে অ ,আ ছাড়া আর কিছু লিখতে পারেনা । চিন্তায় পড়ে যায় জামদা এলাকার বাসিন্দারা । এই কিশোরকে নিয়ে কী করবে তাঁরা ।
সেই সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা । সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি সকলের কাছে তুলে ধরে । তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই কিশোরের পরিচয় জানা যায় । জানা যায়, কিশোরটি নাম শুভদীপ আচার্য বয়স ১৭ বছর । বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ঠিকমত কথা বলতে পারেনা । প্রায় ৭০ শতাংশ প্রতিবন্ধী । তাঁর বাড়ি খড়গপুর শহরের ইন্দা এলাকার শরৎপল্লী সবুজ সংঘ ক্লাবের সামনে ।
তৎক্ষণাৎ সংবাদমাধ্যমের কর্মীর সাহায্যে ভিডিও কলের মাধ্যমে ওই কিশোরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন তাঁর মা ও বাবা । তাঁরা ছেলেকে খুঁজে পেয়ে আত্মহারা হয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন । তাঁরা জানান, খড়গপুর থেকে ঝাড়গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে । তারপরেই জামদা এলাকায় পৌঁছায় ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ । মূক ও বধির শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ।
শুভদীপ এর বাবা হেমন্ত ভট্টাচার্য বলেন, “বুধবার সকাল থেকে শুভদ্বীপকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । সারাদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করি । ইন্দা এলাকায় টোটোতে মাইকিং করে খোঁজও চালানো হয় “। তাঁরা কোথাও খুঁজে না পেয়ে গতকাল রাত্রে খড়গপুর টাউন থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ জানায় । তারপরে এদিন সকালে জানতে পারে শুভদ্বীপ ঝাড়গ্রামে । কিভাবে ঝাড়গ্রাম এল তা কিছুই জানেন না হেমন্তবাবু ।
দুপুরে ঝাড়গ্রাম থানায় পৌঁছায় খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ তারপর ঝাড়গ্রাম থানায় শুভদীপের পরিবারের লোকজনের হাতে তুলে দেয়া হয় শুভদীপকে । শুভদীপকে কাছে পেয়ে আত্মহারা হয়ে চোখের জল নিয়ে শুভদীপের মা অম্বিকা ভট্টাচার্য বলেন,” আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে । আমি সংবাদমাধ্যমের কর্মী ও ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশদের ধন্যবাদ জানাই । তাঁদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না ।”