নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: মালদহ :: শনিবার ১,মার্চ :: ২৫ বছর ধরে পায়ে শেকল ! মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে বেঁধে রেখেছেন বাবা-মা। রাস্তার ধারে খাস সরকারি জমিতে বাড়ি। ইটের দেওয়ালের উপর টালির ছাউনি। অসংখ্য ফাটল। বারান্দায় বাঁশের খুঁটিতে দড়ি দিয়ে বাঁধা এক যুবতী। বয়স বোঝার উপায় নেই। অবশ্য আধার কার্ডের তথ্য বলছে, বয়স ৩৭ বছর।
আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে তাঁকে সেভাবেই বাঁধা থাকতে দেখে আসছে গ্রামের সবাই। কারণ, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। শুধু কি তাই ? ওই বাড়ির আরও দুই মেয়েও মানসিক ভারসাম্যহীন। বাড়ি ছেড়ে কোথায় গিয়েছে, কেউ জানে না। কবে বাড়ি ফিরে আসবে , সেটাও কেউ বলতে পারেন না।
ইংরেজবাজার ব্লকের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শৈলপুর গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা শেখ জাক্কার৷ বয়স এখন ৭৫। একসময় দিনমজুরি করতেন। বছর কয়েক ধরে শরীর আর সঙ্গ দেয় না। শ্রমিকের কাজ ছাড়তে হয়েছে। স্ত্রী মালেকা বিবি কয়েকটি ছাগল প্রতিপালন করেন। তাঁর বয়সও ৬০ বছর পেরিয়েছে৷ বৃদ্ধ এই দম্পতির চার মেয়ে। তিনজন বিশেষভাবে সক্ষম।
শুধুমাত্র বড় মেয়ে খানিকটা সুস্থ। অনেক চেয়েচিন্তে তাঁর বিয়ে দিতে পেরেছেন। একসময় তিন মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছিলেন৷ কিন্তু খরচের ধাক্কায় বেশিদিন টানতে পারেননি৷ বছর পনেরো আগে প্রশাসন মেয়েদের বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিল৷
চিকিৎসার জন্য কোনও টাকা লাগেনি বটে, কিন্তু সেখানে যাতায়াত আর খাওয়ার জন্য খরচের বহর বাড়ছিল।
দিনদশেক পরেই মেয়েদের বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছিলেন বাবা। এখন চিকিৎসার প্রশ্নই নেই। দু’বেলা পাঁচজনের পেটই ভরাতে পারছেন না জাক্কাররা। মেয়েদের চিকিৎসা করানো এখন তাঁর কাছে দিবাস্বপ্নের মতো ৷
বৃহস্পতিবার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় খুঁটিতে বাঁধা গোলবানু৷ বাড়িতে রয়েছেন জাক্কার সাহেবও। কিন্তু স্ত্রী কিংবা বাকি দুই মেয়ে নেই। প্রতিবেশীরা জানালেন, মালেকা বিবি ছাগল চরাতে গিয়েছেন। মেজ মেয়ে জুলি আর ছোট টুম্পা কোথায় গিয়েছে কেউ জানে না ৷ দু’দিন ধরে তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।