সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: কুলতলী :: বুধবার ১৪,মে :: কূলতলি ব্লকের মৈপীঠের প্রত্যন্ত গ্রাম নগেনাবাদ। সেখানে কয়েক হাজার মৎস্যজীবীর বাস। নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরে পেট চালান তাঁরা। মাছ ধরতে গিয়ে প্রায়শই বাঘের হামলার মুখে পড়েন। অনেকের প্রাণও যায়। বাঘের দেবতা হলেন বনবিবি। সুন্দরবনের বাসিন্দারা মনে করেন বনবিবি তাঁদের বাঘের হাত থেকে রক্ষা করেন।
তাই সুন্দরবনে এই দেবীর পুজো হয় ঘটা করে। এখন বনবিবির পুজো হচ্ছে মৈপীঠের নগেনাবাদে। এই পুজো এবার ৬৬ বছরে পড়েছে। তিনদিন ধরে চলছে উৎসব। বহু মানুষ মানত করেন দেবীর কাছে। তা পুরণ হলে নদীতে মোরগ স্নান করান। তারপর ছেড়ে দেন জঙ্গলে। মানত করা মোরগ বাঘের খাদ্য হিসেবে দেওয়ার বিশ্বাস এ এলাকার মানুষের।
বনবিবির পুজোয় মঙ্গলবার যোগ দিয়েছিল প্রায় এক লাখ মানুষ। বনবিবির সঙ্গে পুজো হয় নারায়ণ, বিশালাক্ষী, গঙ্গা, গাজীবাবারও। বৈশাখ মাসের শেষে এ পুজো হয় মাকরি নদীর পাড়ে আজমলমারি জঙ্গলে টিনের ছাউনি দেওয়া দরমার মন্দিরে। এখানে প্রতি পদে বাঘের ভয়। বিপদ আসতে পারে যে কোনও মুহূর্তে।
তবু পুজো দেন মানুষ। পুলিস লাগাতার মাইকিং করে সাবধান করে চলে। অনেকের কাছে এই জঙ্গল বৈঠাভাঙি নামেও পরিচিত। সেখানে পৌঁছতে ৪৫ মিনিট নৌকায় চেপে নদীপথে যেতে হয়। তারপর হাঁটাপথে আরও কয়েক কিলোমিটার কাদাপথ।
তবেই মেলে মন্দির। মানুষের ক্ষোভ, এখানে কোনও জেটি নেই। অথচ মৈপীঠ, কুলতলি, জয়নগর ও অন্যান্য জায়গা থেকেও মানুষ আসেন পুজো দিতে।
প্রচুর মহিলারাও আসেন জেটি না থাকায় সমস্যা সবার। এই গ্রামের বাসিন্দারা পুজো ও উৎসবের আয়োজন করেন। সুন্দরবনের এক গৃহবধুর বলেন, ‘আমার স্বামী মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা গিয়েছিলেন। তারপরও আমার ছেলেকে সংসার চালাতে নদীতেই যেতে হয়। ছেলের মঙ্গল কামনায় পুজো দিয়ে দণ্ডি কাটি।’
এ সময় জঙ্গলে যাওয়ার জন্য মৈপীঠের শনিবারের বাজার ঘাটে নৌকা তৈরি থাকে। পুজোর জন্য ফ্রি সার্ভিস। কখনও নৌকাতে চেপে বসেন ৫০ জন যাত্রী। খুব ঝুঁকি নিয়ে নৌকা করে জঙ্গলে যেতে হয়। মেলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। প্রশাসন সর্তকে থাকে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। তবে আগামিদিনে এই মেলার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।