বর্ধমানের প্রতিবন্ধী সুনীল এক হাতে রিক্সা চালিয়েই ভাগ্যের সাথে লড়ছে

উদয় ঘোষ :: সংবাদ প্রবাহ ::বর্ধমান ::১৫ বছর আগে খড়কাটা মেশিনে ডান হাত বাদ চলে গেছে। তারপর দুবছর ঘরে বসেই কেটেছে। কিন্তু ঘরে প্রতিবন্ধী ছেলে সহ রয়েছে স্ত্রী ও আরও এক সন্তান। তাই তাঁদের মুখে অন্ন তুলে দিতে তিনি বেছে নিয়েছেন রিক্সাচালানো। ডানের হাতের কবজি পর্যন্ত নেই, কিন্তু আছে মনের জোর। সেই মনের জোরকে সঙ্গী করেই জীবনযুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন সুনীল।

সুনীল কর্মকারের বয়স ৪৬। বাড়ি আউশগ্রামের তকিপুরে। রোজ সকালে বাস ধরে চলে আসেন শহর বর্ধমান শহরে। রসিকপুরে এক মালিকের রিক্সা তিনি ভাড়া নিয়ে চালান। সারাদিনে যা রোজগার হয় সেই দিয়েই পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেন সুনীলবাবু। জেলখানা মোড়ে রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ক্ষেতমজুরি করতাম। গ্রামে ১৫ বছর আগে খড়কাটা মেশিনে তাঁর ডান হাত কেটে যায়। তারপর দুই বছর উদভ্রান্ত হয়ে কাটানো।

কিন্তু পরিবারের বাড়তে থাকে অনটন। স্ত্রী কল্পনা লোকের বাড়িতে কাজ করেন। সেই নিয়ে কোনক্রমে চলত সংসার। ডান হাতই নেই, তো কেইবা কাজ দেবেন। তাই সুনীলের ভাগ্যে জোটেনি কাজ। তারপর এক বন্ধুর পরামর্শে রিক্সা চালানোকে বেছে নেন পেশা হিসাবে। বাঁ হাত আর মনের জোরে শহরের অলিগলি রাজপথে ছুটে চলে সুনীল রিক্সা।

শহরের ভিড়ভাট্টা গাড়িঘোড়ার মাঝে সমস্যা হয়না? হাসিমুখে সুনীল জানায়, মানুষ যখন দেখে এক হাত নেই তখন ভয় পায়। জানতে চায়, পারবে তো? আমি বলি- আরে,এটা আমার বাঁ হাতের খেলা। উঠুন…। বাঁ হাতের জোরেই এতগুলো বছর মানুষকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে এসেছে সে।

সারাদিনে কখন জোটে একশ কখন বা দেড়শ। লকডাউনে ঘরে বসে কেটেছে। এখনও ভাড়া হয়না বললেই চলে। দৈনিক ৪০ টাকা দিতে হয় রিক্সা মালিককে।

বাকি টাকা আধপেটা হয়েই চলে দিন। স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করে কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। সুনীলের আর্জি, অনেকেই ছবি তুলে তাঁর এই লড়াই ফেসবুকে পোস্ট করেন। কিন্তু, আর কিছু হয়না। বয়স বাড়ছে।ঘরে প্রতিবন্ধী ছেলে। চারজন সদস্য। আর কতদিন টানতে পারবো জানিনা। রেশন কার্ড থাকলেও যদি আরও কিছু সাহায্য পেতাম তাহলে ভালো হত।

বর্ধমান শহরের সমাজসেবী ও সংগীত শিল্পী কবির সৌরভ সুনীলবাবুর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তিনিও, সকলকে এই ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কিভাবে ওনাকে সাহায্য করা যায়, সেই বিষয়ে চেষ্টা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + fourteen =