প্রধান বিচারপতির ধর্ষককে করা প্রশ্ন নিয়ে তোলপাড় দেশ !

নিউজ ডেস্ক :: সংবাদ প্রবাহ :: নয়াদিল্লি :: ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলায় দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর তার অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি ক্রমশই জোরদার হচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি শারদ বোবড়েকে লেখা একটি খোলা চিঠিতে পাঁচ হাজারের ওপর নারীবাদী, নারী অধিকার কর্মী এবং উদ্বিগ্ন নাগরিক তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন বোবড়ের মন্তব্যে তারা ক্রুদ্ধ এবং তাকে তার বিবৃতি প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই চিঠিতে।

প্রধান বিচারপতি কী বলেছেন যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এই ব্যাপক ক্ষোভ ? তিনি দুটি ন্যক্কারজনক প্রশ্ন করেছেন।
প্রথমটি: আপনি কি ওই মেয়েকে বিয়ে করবেন? তিনজন বিচারকের একটি বেঞ্চের প্রধান হিসাবে বিচারপতি বোবড়ে ২৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাকে জিজ্ঞেস করেন, সে ধর্ষিতা মেয়েটিকে বিয়ে করবে কিনা?

তিনি বলেন, আপনি যদি ওই মেয়েকে বিয়ে করতে চান, আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারি। না চাইলে আপনি চাকরি হারাবেন এবং জেলে যাবেন। তার এই মন্তব্য বহু মানুষকে স্তম্ভিত করেছে। বিশেষ করে অভিযোগকারী নারী, ২০১৪ থেকে ১৫ সালের মধ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনার যেসব ভয়ঙ্কর অভিযোগ এনেছেন, সেসময় তার বয়স ছিল ১৬। অভিযুক্ত ব্যক্তি তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়।

ওই চিঠির বয়ান অনুযায়ী, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে মেয়েটির পিছু নিয়ে তাকে হয়রানি করে, তাকে বেঁধে রাখে, চিৎকার যাতে করতে না পারে তার জন্য তার মুখ কাপড় গুঁজে বন্ধ করে রাখে, স্কুল শিক্ষার্থী অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটিকে বারবার ধর্ষণ করে এবং তার গায়ে পেট্রল ঢেলে গায়ে আগুন দেবার ও তার ভাইকে খুন করার হুমকি দেয়।এতে আরও বলা হয় যে, ওই স্কুল শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ধর্ষণের ঘটনা প্রথম প্রকাশ পায়।

অভিযুক্ত ব্যক্তি মহারাষ্ট্র রাজ্যে সরকারি কর্মচারী এবং তিনি গ্রেপ্তার হলে তার চাকরি হারাবেন এই মর্মে নিম্ন আদালতে আবেদন জানালে তাকে জামিন দেয়া হয়। কিন্তু বম্বে হাইকোর্ট এই নির্দেশকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে তার জামিন বাতিল করে দেয়।ওই ব্যক্তি এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্ট সোমবার তাকে চার সপ্তাহের জন্য গ্রেপ্তার হওয়া থেকে সুরক্ষা দেবার বিষয়টি অনুমোদন করে এবং সেই শুনানির সময় ওই ব্যক্তির আইনজীবী ও বিচারপতি বোবড়ের মধ্যে এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী কথোপকথন হয়।

যারা এই খোলা চিঠিতে সই করেছেন তারা বলছেন প্রধান বিচারপতি শারদ বোবড়ের মন্তব্যকে হালকাভাবে নেবার কোন সুযোগ নেই। কারণ অন্যরাও তখন এটাকে আইনে ব্যবহৃত যুক্তি হিসাবে ভবিষ্যতে খাড়া করার চেষ্টা করবে।

চিঠিতে বোবড়েকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে লেখা হয়েছে, ভারতের শীর্ষ আইনি পদে থেকে প্রধান বিচারপতি এধরনের মন্তব্য করলে সেটা অন্য আদালত, অন্য বিচারক, পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা আছে তাদের কাছে এমন বার্তাই পৌঁছে দেবে যে ভারতে নারীর জন্য ন্যায়বিচার তার সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না। প্রধান বিচারপতি শারদ বোবড়ে এই সমালোচনার কোন জবাব এখনও দেননি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − six =