কুমার মাধব :: সংবাদ প্রবাহ :: মালদা :: একজনের স্বামী নেই। চেয়ে চিন্তে খান। অন্যজনের স্বামী পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি নিজে দুরারোগ্য পেটের রোগ প্যাংক্রিয়াসে আক্রান্ত। চিকিৎসার অভাবে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পূর্ব তালসুর এলাকার এমনই অসহায় দুই মহিলার পাশে দাঁড়ালেন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান। যিনি এলাকায় বুলবুল মাস্টার নামেই পরিচিত।
রবিবার ওই দুটি পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। অসহায় বিধবা মানোয়ারা বেওয়াকে শীতের পোশাক, খাদ্য সামগ্রী ও আর্থিক সাহায্য করেন। আর অসুস্থ নুর বেগমের পরিবারকেও চাল, শীতের পোশাক কম্বল, চাদর ও আর্থিক সাহায্য করেন। পাশাপাশি নুর বেগমের যাতে দ্রুত চিকিৎসা হয় তার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন বুলবুল।
প্রয়োজনে মহিলাকে বাঁচাতে তার অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় লক্ষাধিক টাকা তিনি নিজেই খরচ করবেন বলে বুলবুল জানিয়েছেন। বুলবুল পাশে দাঁড়ানোয় নতুন করে আশার আলো দেখছেন নুর বেগম ও মানোয়ারা বেওয়া।
মালিওর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব তালসুরের (৬২) বছরের বৃদ্ধা মানোয়ারার স্বামী মহম্মদ মোস্তফা কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছেন। মোস্তফা পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মেয়ে আর মাকে দেখেন না। বয়সের ভারে নিজেও কাজ করতে পারেন না। তাই চেয়ে চিন্তে কোনও রকমে দিন কাটে মানোয়ারার। বিষয়টি জানতে পেরেই এদিন মানোয়ারার বাড়িতে হাজির হন বুলবুল। তাকে সাহায্য করেন। ভবিষ্যতে তার যাতে কোনও সমস্যা না হয় তা দেখবেন বলেও আশ্বাস দেন।
মানোয়ারা বেওয়ার বাড়িতে গিয়েই নুর বেগমের অসুস্থতার কথা জানতে পেরে তার বাড়িতে হাজির হন বুলবুল। নুর বেগমের স্বামী বাদেরুল ইসলামও পরিযায়ী শ্রমিক। যা কিছু ছিল স্ত্রীর চিকিৎসায় সর্বস্ব গিয়েছে। এরমধ্যেই শিলিগুড়ি, পূর্ণিয়া, কাটিহারে চিকিৎসা করিয়েছেন। প্রতিবেশীরা চাঁদা তুলে তার চিকিৎসার বন্দোবস্ত করিয়েছেন।
কিন্তু তারপরেও সমস্যা মেটেনি। কেন না যেখানে নুর বেগম চিকিৎসা করিয়েছেন সেখানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে অপারেশন সম্ভব নয় তারা জানিয়েছেন বলে দাবি নুর বেগমের। কিন্তু অপারেশনের জন্য লক্ষাধিক টাকা খরচ করার সামর্থ্য না থাকায় কার্যত বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে পড়ে রয়েছেন নুর বেগম। সব শুনে এরপর নুর বেগমের চিকিৎসার সব রকম বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দেন বুলবুল।
তৃণমূল নেতা বুলবুল পেশায় শিক্ষক। এলাকায় সকলের কাছে তিনি বুলবুল মাস্টার নামেই পরিচিত। এর আগে লকডাউনে তিনি কমিউনিটি কিচেন করে অসহায়দের খাবারের বন্দোবস্ত করেছিলেন। অভাবি পরিবারের খোঁজ পেলেই তিনি তাদের পাশে দাঁড়ান। এবারেও দুই মহিলার পাশে দাঁড়ানোয় খুশি তারা।
বৃদ্ধা মানোয়ারা বলেন, কোনও রকমে চেয়ে চিন্তে দিন কাটে। বুলবুল মাস্টার পাশে দাঁড়ানোয় এখন আশার আলো দেখছি।নুর বেগম বলেন, আর চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই। বুলবুল মাস্টার অপারেশনের বন্দোবস্ত করবেন বলে জানিয়েছেন। ফের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।
তৃণমূল জেলা সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান বলেন, এটা তো আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। নিজের সামর্থ্য মতো অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারলে নিজেকেই সৌভাগ্যবান মনে হয়। নুর বেগম হয়ত সঠিক জায়গায় যাননি। আমরা ওকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাব। সেখানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডেই চিকিৎসা হবে। ওর অপারেশন করে যাতে সুস্থ করে তোলা যায় সেজন্য সবরকম চেষ্টা করব।