সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: বারুইপুর :: শনিবার ২০,সেপ্টেম্বর :: শারদোৎসব মানেই ঐতিহ্যের আর সাবেকিয়ানার মেলবন্ধন ৷ যেমন বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো ৷ হাজার হাজার বারোয়ারি পুজোর ভিড় আর থিমের চমক থাকলেও আজও অমলিন বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো ।

কয়েকদিনের জন্য ঘরে ফেরে পরিবারের লোকজন ৷ জমিদারী না থাকলেও, কোন অংশে বনেদিয়ানাতে খামতি নেই দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গা পুজোয়।
এই জেলার অন্যতম পুরানো দুর্গা পুজো এটি। এক সময় জেলার বাবুদের বাড়ির পুজো বলতে এই পুজোটিকেই সকলে জানতো। ৩৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এই পুজো চলছে বারুইপুরে রায়চৌধুরী বাড়িতে।
ব্রিটিশ শাসক লর্ড কর্ণওয়ালসিসের সময়ে এই এলাকায় জমিদারির পত্তন হয় রায়চৌধুরীদের। আর সেই থেকেই শুরু হওয়া দুর্গাপুজো নিজস্ব জৌলুস নিয়ে আজও অমলিন।
সরকারী ভাবে নীলকণ্ঠ পাখি ধরা ও দুর্গা ঠাকুর বিসর্জনের পর তা উড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, এটাই প্রধান বিশেষত্ব এই বনেদি বাড়ির পুজোর।দশমীতে বিসর্জনের পর নিলকণ্ঠ পাখি ওড়ালে, সে গিয়ে কৈলাসে ভগবান শিবকে খবর দেবে মা দুর্গা মর্ত ছেড়ে কৈলাসের উদ্দ্যেশে রওনা দিয়েছেন।
এই বিশ্বাস থেকে আজও বিসর্জনের পর বারুইপুরের আদি গঙ্গার সদাব্রত ঘাট থেকে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে আসছেন বারুইপুরের এই আদি জমিদার রায়চৌধুরীরা। তবে গতবছর পাখি পাওয়া যায়নি বলে ওড়ানো হয়নি। কিন্তু এবার পাখি পাওয়া গেলে সেই পুরানো রীতি মেনেই ওড়ানো হবে নীলকণ্ঠকে, দাবি রায়চৌধুরীদের।
এছাড়াও এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব হল, মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে যায় দেবীর আরাধনা। এখনও সপ্তমি ও অষ্টমীতে পাঁঠাবলি হয়। নবমীতে হয় আখ ও চাল কুমড়ো বলি। একদা এই পরিবারের হাতে জেলার বহু জমি ছিল। জাঁকজমক করে পুজো হতো জমিদারবাড়িতে।
জাঁকজমক না থকলেও অতীতের ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে এখনও। পুজোর প্রতিদিন মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। এক সময় প্রতিদিন দেড় মণ চালের ভোগ নিবেদন করা হতো। এখন অতটা না করলেও ভোগের চালের পরিমাণ কম নয়। সপ্তমী থেকে নবমী প্রতিদিনই পাঁঠা বলি হয়।
অষ্টমীর দিন কয়েকশো মানুষ মায়ের ভোগ খেতে আসেন। সেই ভোগ রান্না করেন রায়চৌধুরী পরিবারের মহিলারাই। পুজোর দিনগুলিতে এখনও রায়চৌধুরী পরিবারের হাতে থাকা ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী এলাকার জমিতে বসবাসকারী মানুষ আসেন। দশমীর সকালে বাড়ির মেয়েরা সিঁদুর খেলেন।
বিকেলে ৪০ জন বাহক প্রতিমা কাঁধে করে নিয়ে যায় আদি গঙ্গার সদাব্রতঘাটে বিসর্জনের জন্য। সরকারের অনুমতি না থাকলেও বাড়ির ঐতিহ্য অনুযায়ী জীবন্ত নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়।