নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: ঝাড়গ্রাম :: শনিবার ২০,সেপ্টেম্বর :: ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দির প্রায় ৫০০ বছরের ও বেশি পুরনো । এই মন্দির ঘিরে একাধিক লোকো কথা আছে। আর পাঁচটা পুজোর থেকে মা দুর্গার পুজো এখানে অনেকটাই আলাদা। শাক্ত মতে পুজো হয় এখানে। বলির প্রচলন ও আছে। সাবিত্রী মন্দির সৃষ্টির লোককথা হল –
আজ থেকে প্রায় চারশ বছর আগে ঘন জঙ্গল ছিলো এসমস্ত এলাকা। রাজস্থান থেকে শিকারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে রাজা মান সিং এখানে এসে পড়েন। ঘন জঙ্গলে হঠাৎ ই তিনি এক অপূর্ব সন্দরী রমনী কে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখেন। তার রুপে মুগ্ধ রাজ সাত পাঁচ না ভেবেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।রাজার কথা শুনে দেবী শর্ত রাখেন রাজা সামনে পথ দেখিয়ে তাকে নিয়ে যাবেন। পেছনে সে যাবে। তবে কোনো অবস্থাতেই পেছন ঘুরে তাকানো চলবে না। তাহলেই তিনি অদৃশ্য হয়ে যাবেন। শর্ত মেনে রাজা তার রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
বেশ কিছু পথ চলার পর হঠাৎ করেই রাজার মনে হয় দেবী তাকে ঠকায় নি তো। পেছনে তো কোনো আওয়াজ নেই। তাহলে কি তাকে ছেড়ে পালালো দেবী।
কিন্ত পেছনে তাকালে সত্যি দেবী যদি হারিয়ে যান এসব ভাবতে ভাবতে পেছন ফিরে তাকিয়ে ফেলেন রাজা মান সিং। সাথে সাথেই ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা। তিনি দেখেন সুন্দরী রমনী আস্তে আস্তে প্রবেশ করছেন মাটির নিচে। তা দেখে রাজা ছুটে আসেন । কথা রাখতে না পারার জন্য করুন পরিনতি হয়।
সে সময় রাজা ঐ রমনীর মাথার চুল ধরে টেনে তোলার চে ষ্টা করেন। ব্যার্থ হন তিনি। তার হাতের মুঠোয় ঐ রমনীর এক গাছা চুল থেকে যায়। সেই দিন রাতেই রাজা স্বপ্নাদেশ পান মা সাবিত্রী ঐ স্থানে ই মন্দির গড়ে তার পুজোর নির্দেশ দেন।
সেই থেকে মা সাবিত্রী র চুল কে পুজা করা হয় এখানে। মমায়ের তাই এখানে শুধু মুখের অং শ টুকুই দেখা যায়।
সাবিত্রী দেবীর নিত্য পুজা হয় এখানে। মা সাবিত্রী র ই অারেক রুপ যেহেতু দেবী দুর্গা তাই দুর্গা পুজার দিন গুলো এখানে ধুমধাম করে পুজা হয়। তবে সেটাও বৈচিত্র্য পূর্ণ। এখানে মূর্তী পুজোর কোনো প্রচলন নেই।
পটে পুজো হয় এখানে। একমাত্র জেলায় বর্তমানে সম্ভবত এখানেই পটে পুজো হয়। তাই অনেকেই এই পুজোকে পটেশ্বরী র পুজো বলে।
পুজোর প্রায় ১৫ দিন আগে জিতাষ্টমীর দিন থেকে শুরু হয় এখান কার দুর্গা পুজো। পুরাতন পঞ্জিকার নিয়ম মেনেই নিষ্ঠা সহকারে মায়ের পুজো করা হয়। প্রতিদিন যজ্ঞ ,হোম ও চণ্ডীপাঠ করা হয়। শুধু ঝাড়গ্রাম নয় অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার, পার্শ্ববর্তী ঝাড়খন্ড ও উড়িষ্যা থেকে বহু মানুষ রাজবাড়ির পুজা দেখতে আসেন।