পুজোয় আমন্ত্রিত থাকতেন বঙ্কিমচন্দ্র , প্রসাদ পৌছাতো নেতাজির বাড়িতে

সুদেষ্ণা মন্ডল  : সংবাদ প্রবাহ :: জয়নগর :: বুধবার ২৪,সেপ্টেম্বর :: দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন প্রান্তের অলিতে-গলিতে লুকিয়ে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহাসিক দুর্গাপুজো।

তেমনি বেশ কয়েকটি প্রাচীন বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর মধ্যে অন্যতম হল জয়নগরের দত্তবাড়ির পুজো ৷ অনেকেই আবার একে সাদা দত্তবাড়ির দুর্গাপুজো বলে জানেন। মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু হয় এই পুজো ।

তৎকালীন পুজোয় দশ দিন ধরে দত্তবাড়িতে অনুষ্ঠান লেগে থাকত ৷ মহালয়ার পরের দিন শুরু হত দেবীর বোধন ৷ এরপর টানা ১০ দিন পুজো শুরুর সময় বন্দুকের গুলির আওয়াজ করে পুজোয় বসতেন পুরোহিতরা ।

তবে জমিদারি প্রথা অবলুপ্ত হলেও দত্তবাড়িতে এখনও টানা ১০ দিন ধরে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে দেবীর আরাধনা করা হয় । পরিবারের সদস্যরা সকলেই কর্মসূত্রে দূরদূরান্তে থাকেন ৷ তবে পুজোর সময় তাঁরা বাড়ি ফেরেন ৷

এখনও প্রথা মেনেই রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো হয় ৷ বংশপরম্পরায় মৃৎশিল্পী, পুরোহিত ও ঢাকিরা এই বাড়িতে পুজোয় সামিল হন । কলকাতার জমিদার রামচদ্র দত্ত ১৬৭৫ সালে সুন্দরবনের কাছে জয়নগরে এসে নিজের জমিদারি স্থাপন করেন।

তখন অবিভক্ত পরগনার অধিকাংশই ছিল সুন্দরবনের অংশ। তার পর থেকেই এই অঞ্চলে পুজো শুরু করেন রামচন্দ্র দত্ত।

এই পুজোয় ব্রাহ্মণরা পুজো শুরু করতেন বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়ে। মহালয়ার পর দিনই হয় বোধন। দশদিন ধরে এখানে উদযাপিত হয় দুর্গাপুজো। বর্তমানে গুলি না ছুঁড়লেও আতসবাজি ফাটিয়ে পুজো শুরু করা হয়। বলি প্রথা এখনও রয়েছে এই পুজোয়।

প্রসঙ্গত, বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন এই বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন এই বাড়ির পূর্বপুরুষ যোগেন্দ্র কিশোর দত্তের বন্ধু। এই বাড়িতে বহুদিন কাটিয়েছেনও সেই সুবাদে। বঙ্কিমের একাধিক লেখাতেও দত্তবাড়ির উল্লেখ পাওয়া যায় সেই সূত্রেই।

অন্যদিকে, পারিবারিক সূত্রে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও দত্ত বাড়িতে যোগযোগ ছিল আত্মীয়তার সুবাদে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাড়িতে পৌঁছাতো এই দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রসাদ।পরিবার সূত্রে জানা যায়, সুভাষচন্দ্র ছিলেন এই বাড়ির বংশধর শিবেন্দ্রনারায়ণ দত্তের ছোট ঠাকুমার দাদা।

স্বাধীনতা আন্দোলনের বেশ কয়েকটি সভা এই বাড়ির সামনের মাঠে আয়োজিত হয়েছিল সেই সুবাদেই। পরবর্তীতে এই দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজো ও জন্মাষ্টমীর গোপাল উৎসবে আসতেন সত্যজিৎ রায় এবং উৎপল দত্ত সাহ আরো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − eleven =