দাঁশায় নাচের মাধ্যমে হুদুর দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা ও শোকজ্ঞাপন করে থাকেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: জঙ্গলমহল :: বৃহস্পতিবার ২,অক্টোবর :: মায়ের আগমনে আপমর বাংলা যখন আনন্দে মাতোয়ারা সেই সময় জঙ্গলমহলের গ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা দাঁশায় নাচের মাধ্যমে হুদুর দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা ও শোকজ্ঞাপন করে থাকেন। আদিবাসী দের নিকট হুদুর দুর্গা বীর যোদ্ধা।

তাই হুদুর দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা ও শোকজ্ঞাপন করে আজও প্রথা মেনে হয় দাঁশায় নাচ। অন্যমতে , দাঁশায় নাচ সম্পুর্ণরূপে খরা এলাকায় নিজেদের কষ্ট লাঘবের জন্য প্রকৃতি দেবতার নিকট আকুতি। সেই অর্থে “দাঁশাই” কৃষিভিত্তিক ও প্রকৃতি বন্দনার নাচ” সাওতালি ভাষায় দাঁসায় শব্দের অর্থ হল দাঁ – হল জল এবং সায় – প্রশমিত হওয়া বা কমা।‘হুদুর দুর্গা’ র শোকে জঙ্গলমহলের গ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা এই নৃত্য করে থাকেন। সাঁওতালি লোকসাহিত্য অনুযায়ী, ‘হুদুর’ কথার অর্থ প্রচণ্ড জোরে বয়ে চলা বাতাস কিংবা ঝড়।

খেরওয়ালরা বিশ্বাস করেন, সাঁওতাল সম্প্রদায় গঠনের আগে তাঁরা খেরওয়ালদের বংশধর ছিলেন, যাঁদের শাসক চাইচম্পা নামে এক অঞ্চলের তত্ত্বাবধান করতেন।

চাইচম্পা প্রথমে ছিল এক সমৃদ্ধ জনপদ। চাইচম্পা গ্রামের রাজা তিনি অত্যন্ত বলশালী ও ক্ষমতাধর রাজা ছিলেন।আর্যরা ভারতে আসার পর কোনমতেই তাকে পরাজিত করতে পারছিল না।লোককথা অনুসারে, আর্য ও অনার্য সংঘাতে হুদুরদুর্গা কে অন্যায় ভাবে হত্যা করে আর্যরা।

কথিত আছে, প্রথা অনুযায়ী, হুদূর দুর্গা কখনই নারী বা শিশুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেন না। সেই সুযোগ নিয়ে আর্যরা নারীকে সামনে রেখেই হুদূর দুর্গা র বিরুদ্ধে জয় পান। সেই যুদ্ধে র পর হুদূর দুর্গা খোঁজ পাওয়া যায়নি । আদিবাসীদের মতে সেই নারী হলেন দুর্গা।

সেই কারনে দুর্গাপূজা র দিনগুলোতে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে দাঁশায় নাচের মাধ্যমে হুদুর দুর্গার খোঁজ করার প্রথা চলে আসছে আদিবাসীদের মধ্যে ।

ভূয়াং , বাঁশি,কাঁশা,বড় করতাল সহ বিভিন্ন ধরনের আদিবাসী বাদ্য নিয়ে মাথায় ময়ূরের পালক পায়ে নূপুর ও রঙিন শাড়ি ধূতি পরে অর্ধনারী বেশে গ্রামে গ্রামে দাঁশাই নাচের মাধ্যমে রাজার মৃত্যুর শোক পালন করে থাকেন ।

এই জন্য প্রত্যেক গানের কলি তে হায়রে হায়রে বলে আরম্ভ হয় । এই নাচের বিনিময়ে গৃহস্থ বাড়ি থেকে চাল খাদ্য দ্রব্য ও অর্থ পেয়ে থাকেন । অনেকের মতে, এটি সম্পূর্ণ রুপেই গল্পকথা এবং এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + seventeen =