সজল দাশগুপ্ত :: সংবাদ প্রবাহ :: শিলিগুড়ি :: মঙ্গলবার ৭,অক্টোবর :: রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে সোমবার বিকেলের দৃশ্য। শিলিগুড়ি মহারাজা হাসপাতালের কেবিনে শয্যাশায়ী বিজেপি বিধায়ক খগেন মুরমুকে দেখতে এলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় — উপস্থিত থেকেও পিতার সঙ্গে একটি শব্দও বিনিময় করলেন না তাঁর ছেলে। নীরবতা, চোখের জল আর রাজনীতির ছায়ায় ঘেরা ছিল সেই কয়েক মিনিট।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন খগেন মুরমু। রবিবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্থানান্তর করে আনা হয় শিলিগুড়ি মহারাজা হাসপাতালে।
আহত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু পাশে পরিবার
সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেখানে পৌঁছন। হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর আগমন ঘিরে নিরাপত্তা ছিল তীব্র, পুরো হাসপাতাল চত্বরে মোতায়েন ছিল পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালের সুপার ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে খগেন মুরমুর শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত রিপোর্ট নেন। তারপর তিনি কেবিনে প্রবেশ করেন। উপস্থিত ছিলেন বিধায়কের স্ত্রী, পরিবারের সদস্যরা ও পুত্র। মুখ্যমন্ত্রী বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট নীরবে খোঁজখবর নেন, তাঁর কাঁধে হাত রেখে দ্রুত আরোগ্যের কামনা করেন।
কিন্তু এই সময় বিধায়কের ছেলে একেবারে নীরব — মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কোনও কথা না বলেই বেরিয়ে যান কেবিন থেকে।
ঘটনাটি ঘিরে হাসপাতাল চত্বরে জল্পনার ঝড় ওঠে। অনেকেই বলছেন, পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্যই এই নীরবতার কারণ। খগেন মুরমু বরাবরই বিজেপির প্রবীণ নেতা হলেও তাঁর ছেলে দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে কাজ করছেন বলে সূত্রের দাবি।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল বলছে, এই ঘটনাই রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত দূরত্বের এক প্রতীকী ছবি। এক পক্ষ বলছে— “রাজনীতি মানবিকতার উপরে নয়”, অন্যদিকে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ‘রাজনৈতিক তাৎপর্য’ নিয়ে।
মুখ্যমন্ত্রীর সফর শেষে হাসপাতাল প্রশাসন জানায়, খগেন মুরমুর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল হলেও তাঁর পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে রাজ্য সরকারের তরফে চিকিৎসার পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
হাসপাতালের করিডরে এখনও রয়ে গেছে সেই নীরব মুহূর্তের প্রতিধ্বনি — একদিকে অসুস্থ পিতা, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী, আর মাঝখানে নীরব পুত্র — যেন রাজনীতির মধ্যে এক মানবিক নাটকের বাস্তব দৃশ্য।