কমলাকান্তের কালীর সাধনা: অমাবস্যার আঁধারে যে মন্দিরে জেগে থাকে দুই শতাব্দীর অলৌকিক ইতিহাস!মায়ের পায়ে বেল কাটা ফুটিয়ে মায়ের গা থেকে রক্ত বার করে প্রমানিত করেছিলো সাধক ভক্তদের

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: বর্ধমান : শনিবার ১১,অক্টোবর :: বর্ধমান শহরের নিস্তব্ধ অলিগলি পেরিয়ে যখন ভোরের কুয়াশা গড়িয়ে আসে বোরহাটের দিকে, তখনও এক মন্দিরে জ্বলে ওঠে দীপশিখা—কমলাকান্ত কালীবাড়ি।

দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই মন্দিরে আজও চলে অমাবস্যার রাত্রির সেই গোপন সাধনা, যেখানে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর মন্ত্রোচ্চারণে জেগে ওঠে কমলাকান্তের কালী।

সালটা ছিল ১৮০৯। তন্ত্রসাধনার দীপে আলোকিত কমলাকান্ত নিজ হাতে গড়েছিলেন মাটির কালীমূর্তি, আর প্রতি অমাবস্যায় তাঁরই হাতে সেই মূর্তির পুজো হতো। পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে তিনি সিদ্ধিলাভ করেছিলেন—এমনটাই কথিত।আর সেই থেকেই এই মন্দিরের প্রতিটি ইটে, প্রতিটি ঘণ্টাধ্বনিতে যেন লুকিয়ে আছে তাঁর তপস্যার প্রতিধ্বনি।

কমলাকান্তের জন্ম পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। অল্প বয়সেই পিতৃহারা হয়ে আশ্রয় নেন গলসির চান্না গ্রামে মামাবাড়িতে। সেখানেই তন্ত্রসাধনার পথে এগোন তিনি। তাঁর অলৌকিক সাধনার কথা পৌঁছে যায় তৎকালীন বর্ধমান মহারাজ তেজচন্দ্র মহাতাবের কানে।

মহারাজ নিজে তাঁকে বর্ধমান শহরে নিয়ে এসে দায়িত্ব দেন রাজপরিবারের কালীপুজোর। পাশাপাশি, মহারাজের উচ্ছৃঙ্খল পুত্র প্রতাপচন্দকে জ্ঞান ও শিষ্টতার পথে ফেরানোর দায়িত্বও নেন কমলাকান্ত।

কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে তেজচন্দ্র মহারাজ তাঁকে উপহার দেন বোরহাটের লাকুড্ডির একটি বাড়ি ও কোটালহাটে একখণ্ড জমি। সেই জমিতেই প্রতিষ্ঠা করেন তিনি নিজের দেবী—‘কমলাকান্ত কালীবাড়ি’।

মন্দিরের ভেতরে আজও ঝুলে আছে তামার ঘণ্টা, পাথরে খোদাই করা মন্ত্রপদ, আর কালো কষ্টিপাথরের ছয়-ফুট উচ্চতার কালীমূর্তি—যেখানে বলা হয়, প্রতি অমাবস্যায় নাকি অদৃশ্য ভাবে উপস্থিত হন সাধক কমলাকান্ত নিজেই।

প্রতি বছর কালীপুজোর রাতে যখন ভক্তরা মাগুর মাছের পদে ভোগ সাজান, তখন শোনা যায়, সেই পুরনো মাটির মূর্তির গন্ধ মিশে থাকে বাতাসে। হয়তো সে গন্ধই মনে করিয়ে দেয়— সাধনা কখনও মরে না,সাধকও না।

মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের মুখ থেকে আরো নানা অলৌকিক কাহিনী শোনা যায়। সাধক কমলাকান্ত যখন দেহত্যাগ করেন তখন শিষ্যরা বলেছিলেন যে ঠাকুর আপনাকে গঙ্গায় নিয়ে যাব তখন সাধক কমলাকান্ত বলেন আমি মাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না, পরে মাটি ফেটে জল ওনার দেহ দিয়ে বয়ে গিয়েছিল।

সাধক কমলাকান্তের সমাধির উপরে মায়ের মূর্তি রেখে আজও পূজো হয় যেটা ভারতবর্ষের কোথাও হয় না। আরো একটি আশ্চর্যের ঘটনা আর সেটা হলো যখন বর্ধমান রাজা সহ শিষ্যরা এবং বিভিন্ন ভক্তরা কমলাকান্ত সাধক কিনা এটা পরীক্ষা করছিলেন,

তখন সাধক বেল কাঁটা মায়ের শরীরে প্রবেশ করিয়ে রক্ত বের করে দেখিয়েছিলেন। ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সকলে। তন্ত্র মতে কালীপুজো হয় আজও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − three =