পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের প্রান্তিক গ্রাম বিদ্যানগরের কোবলায় আজও পূজিত হন এক অনন্য দেবী— ‘চুনোকালী’ ।

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: বর্ধমান :: বুধবার ২২,অক্টোবর :: শহর ও শহরতলির ঝলমলে আলোর উজ্জ্বলতাকে অনেক দূরে ফেলে, শান্ত-নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশে আজও টিকে আছে এক অন্যরকম কালী পূজোর ঐতিহ্য। পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের প্রান্তিক গ্রাম বিদ্যানগরের কোবলায় আজও পূজিত হন এক অনন্য দেবী— ‘চুনোকালী’ ।

যাঁকে অনেকেই আবার স্নেহভরে ডাকেন ‘বিলেকালী’ নামে। খাল-বিলে ঘেরা এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই পেশায় মৎস্যজীবী। সমাজের প্রান্তিক বাগদি ও জেলে সম্প্রদায়ের এই মানুষগুলিই যুগের পর যুগ ধরে পূজা করে আসছেন তাদের নিজস্ব দেবী ‘চুনোকালী’-র।

তাদের বিশ্বাস, এই দেবীই তাদের জীবিকার দেবী । মাছ ধরা তাদের পেশা ও পূজা দুই-ই তাঁর আশীর্বাদেই টিকে আছে।

এই পুজোর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল ১২ রকমের মাছের ভোগ। দেবীর ভোগে চুনোমাছ থেকে শুরু করে কাঁকড়া পর্যন্ত নানা রকমের পদ থাকে। খাল-বিল থেকে জালে ধরে আনা মাছেই তৈরি হয় দেবীর নৈবেদ্য।

ভোগের তালিকায় থাকে— কাঁকড়া, সোনা খড়কে, মৌরলা, পুঁটি, খয়রা, ল্যাটা, বেলে, কই, শিঙি, মাগুর, ধ্যাদা, চাঁদা ও খলসে মাছের ভাজা পদ।

সঙ্গে পরিবেশিত হয় এক বিশেষ ধরনের মাছের টক। এই সমস্ত রান্নাই করেন গ্রামের জেলে-বাগদি মহিলারা। কোবালা এলাকার চাঁদের বিলের পাড়ে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল একসময় খড়ের চালার নড়বড়ে মন্দিরে।

পরে ২০০০ সালে তৎকালীন এলাকার বিধায়ক স্বপন দেবনাথ এই পুজো ও মন্দিরের দায়িত্ব নেন। তাঁর উদ্যোগেই খড়ের চালা ছেড়ে দেবী এখন আশ্রয় পেয়েছেন কংক্রিটের এক মন্দিরে।

বর্তমানে রাজ্যের প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী হলেও স্বপনবাবু এখনও এই পুজোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকেন। তাঁর কথায়, এই পুজোয় বিলে মাছ ধরা মানুষগুলোর আবেগ জড়িত। আমি শুধু পাশে থাকি । তাদের উৎসবে কোনো হস্তক্ষেপ করিনা।

তবে ‘চুনোকালী’ নামের উৎপত্তি নিয়ে স্থানীয়দের কৌতূহলও কম নয়। শাস্ত্রে বা পুরাণে এমন কোনও কালী দেবীর উল্লেখ নেই। খালের পাড়ে এই পুজো হয়, আর এখানকার মানুষ চুনো মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই তাঁদের মুখেমুখেই দেবী ‘চুনোকালী’ বা ‘বিলেকালী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 3 =