নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: বর্ধমান :: সোমবার ২২,ডিসেম্বর :: ছবির মতো গ্রাম—কথাটা অনেক সময়েই শোনা যায়। কিন্তু সত্যিই যে একটি গোটা গ্রাম নিজেই যেন একটি জীবন্ত ছবি, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম ব্লকের প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রাম লবণধারা এখন সেই কারণেই পরিচিত—‘ছবির গ্রাম’ বা ‘আলপনার গ্রাম’ নামে।
গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল, অলিগলি আর পথঘাট জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রঙিন আলপনা ও লোকশিল্পের কারুকাজ। শিল্পীদের তুলির ছোঁয়ায় রঙিন হয়ে উঠেছে গোটা জনপদ। এই শিল্প-সৌন্দর্যই এখন টানছে দূরদূরান্তের পর্যটকদের।
তার সঙ্গে আউশগ্রাম জঙ্গলমহলের প্রাকৃতিক আকর্ষণ—ময়ূরের ঝাঁক, নানান পাখি, কখনও কপাল ভালো থাকলে ময়াল সাপ বা নেকড়ে বাঘের দেখা—সব মিলিয়ে শীতের মরশুমে লবণধারা পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
লবণধারার ঘরে ঘরে দেওয়ালে আঁকা ছবিগুলো যেন নিজেরাই কথা বলে। কোথাও আদিবাসী জীবনের ছবি, কোথাও প্রকৃতির রূপ, আবার কোথাও লোকজ সংস্কৃতির ছাপ।
গ্রামের পথে হাঁটলেই চোখে পড়ে দেওয়াল জোড়া ক্যানভাস—আলপনা, লোকশিল্প আর আধুনিক ভাবনার অনবদ্য মেলবন্ধন। এই অনন্য শিল্পকর্ম দেখতেই আজ ভিড় জমাচ্ছেন বহু মানুষ।
এই শিল্পচর্চার শিকড় বহু পুরনো। যুগের পর যুগ ধরে লবণধারার আদিবাসী মেয়ে-বউরা নিজেদের ঘর সাজাতে দেওয়ালে ছবি আঁকতেন। উৎসব-পার্বণ হোক বা দৈনন্দিন জীবন—রঙিন নকশায় ঘর সাজানো ছিল তাঁদের পারিবারিক ঐতিহ্য। সেই লোকজ শিল্পই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামটিকে এনে দিয়েছে আলাদা পরিচয়।
সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে বোলপুর থেকে পেশাদার শিল্পীরা এসে গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে নতুন ছবি এঁকেছেন। লোকশিল্পের সঙ্গে আধুনিক ভাবনার মিশেলে তৈরি এই শিল্পকর্ম লবণধারাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। এখন এই গ্রাম আর শুধু বসবাসের জায়গা নয়, একেবারে জীবন্ত শিল্পগ্যালারি।

