নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: বর্ধমান :: মঙ্গলবার ৩০,ডিসেম্বর :: পূর্ব বর্ধমান জেলার শহর বর্ধমান যেন এক অমানবিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াল। SIR (বিশেষ নিবিড় সংশোধন) সংক্রান্ত শুনানিতে হাজিরা দিতে দেখা গেল এক চরম অসহায় পরিবারকে।
যাঁকে শুনানিতে ডাকা হয়েছে, তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ প্রতিবন্ধী—তবুও তাঁর জন্য কোনও ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। ভোলা শেখ একসময় ট্রেনের হকার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দুর্ঘটনাই বদলে দেয় তাঁর জীবন।
হকারির সময় ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে ভোলা শেখের বাঁ হাত ও বাঁ পা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে দু’টি অঙ্গই কেটে ফেলতে হয়। সেই থেকে তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ অক্ষম।
দৈনন্দিন চলাফেরাই যেখানে তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে SIR শুনানিতে সশরীরে হাজির হওয়া কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন অনেকেই। অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ভোলা শেখকে শুনানিতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কোনও মানবিক ছাড় বা বিকল্প ব্যবস্থার সুযোগ না থাকায় শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর কাঁধে ভর করেই তাঁকে শুনানি কেন্দ্রে আসতে হয়। একদিকে শারীরিক যন্ত্রণা, অন্যদিকে নাম বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা—দু’য়ের চাপেই ভেঙে পড়ছিল অসহায় পরিবারটি।
শুনানি কেন্দ্রে সেই দৃশ্য দেখে উপস্থিত বহু মানুষ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রশ্ন উঠছে, গুরুতর শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের ক্ষেত্রে কি বাড়িতে গিয়ে শুনানি, অনলাইন বা ভিডিও কলের মাধ্যমে যাচাইয়ের মতো মানবিক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত না?
এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের দুর্ভোগের গল্প নয়, বরং প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় মানবিকতার অভাবকে সামনে নিয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমশই প্রশ্ন বাড়ছে—নিয়মের কড়াকড়ির পাশাপাশি সহানুভূতি ও মানবিক বোধ কি প্রশাসনের দায়িত্বের অংশ নয়?

