আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদ্প্রবাহ টিভি :: ৫ই,ফেব্রুয়ারী :: কোলকাতা ::
ভারতে ইন্টারনেট বন্ধে ক্ষতি ঘন্টায় দু কোটি !
শিক্ষা, ধর্ম এবং স্বাধীনতার মতো ইন্টারনেট পরিষেবাও মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। জম্মু-কাশ্মিরকে সারা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা নিয়ে একটি আবেদনের শুনানির সময় বছর খানেক আগে এমনই মন্তব্য করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু গত ৪ বছরে ঠিক উল্টো ছবিই ধরা পড়েছে ভারতে। কারণ এই ৪ বছরে সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে ৪০০-রও বেশি বার। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট পরিষেবা সংক্রান্ত হিসেব রাখে যে সংস্থা, সেই টপ টেন ভিপিএন তাদের একটি রিপোর্টে এমনই তথ্য দিয়েছে।
ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখায় ভারতের অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে। তাদের হিসেব অনুযায়ী, ২০২০ সালে মোট ৮ হাজার ৯২৭ ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ভারতে। তাতে ভারতের প্রায় ২৭০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। ডলার পিছু মূল্য যদি ৭৩ টাকা করে ধরা হয়, সেই হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ২ কোটি টাকা করে ক্ষতি হয়েছে ভারতের।
৪ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১ মাসেই ৭ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে ভারতে, যার মধ্যে ৫ টিই ছিল হরিয়ানা, দিল্লি, সোনিপত এবং পালওয়ালের মতো জেলায় কৃষক আন্দোলন ঠেকানোর উদ্দেশে। ২৬ জানুয়ারি লালকেল্লার ঘটনার পর উত্তেজনা রুখতেই ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রও এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই অবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে’।
২০১৯ সালের ৫ অগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকার। তার পর ২৩৩ দিন উপত্যকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। বিশ্বের আর কোন দেশে এত দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার নজির নেই। ২০১৯-এর ৩ অগস্ট থেকে ২০২০-র ৪ মার্চ পর্যন্ত উপত্যকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল।
তবে শুধু টপ টেন ভিপিএনই নয়, অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর তুলনায় ভারতই সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে ঘন ঘন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখে বলে এর আগে আন্তর্জাতিক ফোর্বস ম্যাগাজিনের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মিরের পর রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পর পর বেশ কিছু দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকে। ২০১৭ সালে একটানা ২১ দিন, ২০১৮ সালে একটানা ৫ দিন এবং ২০১৯ সালে একটানা ৩ দিনের বেশি সময় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল।