টানা তৃতীয় দফায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণে লাগাম টানতে কার্যক্রম জোরদারের ঘোষণা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস।

আজ বুধবার সকালে রাজভবনে তৃতীয়বারের জন্য এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলা পৌনে ১১টায় শপথ নিয়ে তিনি ছুটে যান রাজ্য সচিবালয় নবান্নে। সেখানে তিনি প্রথম সভা করেন করোনা নিয়ে। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সেখানে রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নবান্নের বৈঠক সেরে মমতা করোনা পরিস্থিতি দেখতে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল এবং ভবানীপুরের পুলিশ হাসপাতালে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতার পৌর করপোরেশনের প্রশাসক বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 
বিকেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাঁর প্রথম কাজ হবে এই রাজ্য থেকে করোনাকে পরাস্ত করে রাজ্যবাসীর মুখে হাসি ফোটানো।

বর্তমানে কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে করোনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। করোনার বিস্তার রোধে গত ৩০ এপ্রিল থেকে এই রাজ্যে আংশিক লকডাউন কার্যকর হয়েছে। আজ নতুন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা প্রতিরোধে নতুন কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা করলেন  সংবাদ সম্মেলনে।

                                                                                               বিজ্ঞাপন

ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যের সব লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। মেট্রোরেল চালানো হবে অর্ধেক। আর সরকারি যানবাহনও চলবে ৫০ শতাংশ। কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বাজার বসবে সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।

বেসরকারি অফিসের ৫০ শতাংশ চলবে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নিয়মে। তবে চালু থাকবে হোম ডেলিভারি, অনলাইন পরিষেবা, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিষেবা। খোলা থাকবে ওষুধ এবং চিকিৎসাসামগ্রীর দোকান।

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে শপিং মল, রেস্তোরাঁ, বিউটি পারলার, জিম, বার, সুইমিং পুল, স্পা, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সিনেমা হল ইত্যাদি। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান এবং কোনো জমায়েত করা যাবে না। বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি যোগ দিতে পারবেন না।

                                                                                                             বিজ্ঞাপন

কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গজুড়ে করোনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে করোনায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৭ হাজার ৬৩৯ জন। আর মারা গেছেন ১০৭ জন। এর মধ্যে কলকাতায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ৯১৪ জন, আর মারা গেছেন ৩১ জন। সাম্প্রতিককালে এটিই সর্বাধিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। সব মিলিয়ে এখন এই রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৩। আর মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৭৪৪ জনের।

পশ্চিমবঙ্গে এখনো করোনাভাইরাসের টিকার অভাব রয়েছে। এর মধ্যে বুধবারই কলকাতায় আসছে আরও চার লাখ কোভিশিল্ড টিকা।