শীতের রোদে খোলা আকাশের নীচে দ্বারকেশ্বরের চর যেন ‘মুড়িময়’।

বুধন কর্মকার :: সংবাদপ্রবাহ টিভি ডট কম :: : ১৯শে জানুয়ারি :: বাঁকুড়া :: মুড়ি নিয়ে আস্ত একটা মেলা বোধহয় চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। শীতের রোদে খোলা আকাশের নীচে দ্বারকেশ্বরের চর যেন ‘মুড়িময়’।কয়েক হাজার মানুষের আবেগ আর উন্মাদনার এমনই ছবি ফি বছর মাঘের ৪ তারিখ লেন্সবন্দি হয় বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়া গ্রামে। দ্বারকেশ্বরের চরে বসে মুড়ি খেতেই সেখানে মানুষের ঢল নামে বছরের এই দিনটায়। যেমন নামল সোমবার।

আশপাশের এলাকার ৫০-৬০টি গ্রামের মানুষ এ দিন জড়ো হন কেঞ্জাকুড়ায়। উপচে পড়া ভিড় বুঝিয়ে দেয় সংখ্যাটা চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজারের কম কিছুতেই নয়। পরিবার পরিজন নিয়ে নদের চরে বসে মুড়ি খাওয়ার সারি সারি আসর। বাড়ি থেকে বয়ে আনা মুড়ি মাখা হয় তোয়াজ করে।

নদের চরে বালির উপরে গামছা পেতে পঞ্চব্যঞ্জন সহযোগে মাখা হয় মুড়ি। মেনুতে থাকে আলুর চপ, বেগুনি, শিঙাড়া, চানাচুর, কাঁচা পেঁয়াজ আর লঙ্কা। বাদ পড়ে না টমেটো, কড়াইশুঁটি। অনকের ঝুলিতে থাকে নারকেল নাড়ু, পিঠে। নদের বালি সরিয়ে বের করা হয় জল। সেই জলেই মুড়ি মেখে চলে দিব্যি খাওয়াদাওয়া।

বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকে কেঞ্জাকুড়া। শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর। নদের ধারে সঞ্জীবনী মাতার আশ্রম। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে সেখানে বসে হরিনাম সংকীর্তনের আসর। ফি বছর তা চলে মাঘের ১ থেকে ৪ তারিখ পর্যন্ত। আর শেষ দিন অর্থাৎ ৪ মাঘ বসে মুড়ি মেলা। কেঞ্জাকুড়ার বাসিন্দা জয়ন্ত কর জানালেন, 150 বছরের বেশি এই প্রাচীন মেলার আড়ম্বর বেড়েছে গত ৩০ বছরে।

আশ্রমের আশপাশের এলাকা এক সময় ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা হরিনাম সংকীর্তন শুনে সন্ধ্যার পরে আর বাড়ি ফিরতে পারতেন না। সঙ্গে করে বেঁধে আনা মুড়ি বাতাসাই ছিল তাঁদের ভরসা। সেই রেওয়াজই ধীরে ধীরে মেলার চেহারা নিয়েছে।’এই মেলা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বহু দূর দূরান্তের মানুষেরা হাজির হয় এই দারকেশ্বর নদীর তীরে মিলন মেলা রূপ ধারণ করে।

মেলায় হাজির হওয়া গ্রামবাসীদের জন্য এ দিন দুপুরে খিচুড়ি প্রসাদের ব্যবস্থা থাকে সঞ্জীবনী মাতার আশ্রমে। দ্বারকেশ্বরে স্নান সেরে নদের চরে চলে খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়া। উৎসব চলে গোটা দিন। ফের একটা বছরের অপেক্ষা নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে নিজের নিজের গ্রামের পথে পা বাড়ান আট থেকে আশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 2 =