ঘুমপাড়ানি বাসে নিদ্রাভ্রমণ

নিউজ ডেস্ক :: সংবাদ প্রবাহ :: নিউদিল্লি :: হংকংয়ের চরম আবাসন সংকটের মধ্যে দারুণ সুখবর নিয়ে এলো দেশটির উলু ট্রাভেল এজেন্সি।কাজের চাপে রাতে ভালো ঘুম হয়নি কিংবা ঘরের অভাবে ঘুমানোর সুযোগই হয়নি অথবা জেগেই কাটে সারারাত, শত চেষ্টায়ও ঘুম আসে না চোখে- হংকংয়ের এসব দুর্ভাগা মানুষের জন্য ‘ঘুমপাড়ানি বাসের’ ব্যবস্থা চালু করল দেশটির এই জনপ্রিয় বাসসেবা প্রতিষ্ঠান। শনিবার থেকে যাত্রীপরিষেবা শুরু করেছে। প্রথম দিনেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এপি

হংকংয়ের ইতিহাসে প্রথম এই অভিনব বাসভ্রমণের মেয়াদ পাঁচ ঘণ্টা। হংকংয়ের তুয়েন মুন মহাসড়ক ধরে নর্থ লানতাউ দ্বীপের আশপাশে যাত্রীদের নিয়ে টানা পাঁচ ঘণ্টায় ৭৬ কিলোমিটার এলাকায় ঘুরবে। এ সময় যাত্রীরা বাসটিতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হতে পারবেন। যাত্রীদের ঘুমের দেশে নিয়ে যেতে পুরো বাসেই ঘুম ঘুম পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

যাত্রা শুরুর আগে স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁ থেকে ভরপেট খেয়ে নিতে পারবেন যাত্রীরা। দ্বিতল বাসটির ওপরের তলায় দুই ধরনের কেবিন। একটি শব্দপ্রতিরোধী ‘জিরো ডেসিবল স্লিপিং কেবিন’। অন্যটি ‘ভিআইপি প্যানারোমা কেবিন’। উপরতলার কেবিনগুলোতে কথা বলা দূরের কথা ‘পিনপতন শব্দও’ নিষিদ্ধ।

তবে নিচেরতলার ‘ফটোটেকিং কেবিন’ ফিসফাস স্বরে কথা বলার অনুমতি রয়েছে। ঘুমের পরিবেশ তৈরিতে যাত্রীদের কানে ইয়ারপ্লাগ ও চোখ ঢাকার জন্য স্লিপিং মাস্ক বিতরণ করবে কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিনেই বাসটির চাহিদা ছিল তুঙ্গে। প্রথম দিনের নির্ধারিত সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। এদিন যাত্রীরা মজাদার ঘুমের জন্য চপ্পল পরেই কম্বল, বালিশ, স্লিপিং গাউন বাসে ওঠেন।

উলুর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার কেনেথ কং বলেন, ‘আমি আমার এক বন্ধুর সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টে দেখেছি, কাজের চাপে রাতে ভালো ঘুম না হওয়ায় সে ভীষণ অসুস্থ বোধ করছিল। সে জানিয়েছিল বাসে উঠলেই তার ঘুম পায়। তখনই আমরা এ ধরনের সার্ভিস দেওয়ার কথা চিন্তা করি।’ তিনি জানিয়েছেন, এই বাস ভ্রমণে জনপ্রতি টিকিটের দাম নিচতলা-দোতালা বিবেচনায় ১৩ বঠভা (এক হাজার ১০০ টাকা) থেকে ৫১ মার্কিন ডলার (চার হাজার ৩০০ টাকা)।

৪৫ যাত্রী ধারণক্ষমতার বাসটিতে যাত্রীদের ভালো ঘুমের জন্য সরবরাহ করা হবে একটি গুডিব্যাগ, যেখানে থাকছে আইমাস্ক এবং কানের প্লাগ। রোদ পোহানো কিংবা প্রাকৃতিক কর্মের জন্যও নির্ধারিত স্থানে থামার ব্যবস্থা রয়েছে বাসটির। যাত্রীদের মধ্যে ২৫ বছর বয়সি আনসন কং বলেন, ‘আমি অনিদ্রায় ভুগছিলাম; তাই এখানে এসে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করেছি।’ তিনি বলছিলেন, সফরটি তার প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ও আকর্ষণীয়।

প্রথম দিনে বাসটি শহরের লানতাউ দ্বীপে থেমেছিল। যেন যাত্রীরা প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে মিশে গিয়ে সেলফি তুলতে পারেন। একটি স্টপ ছিল হংকং-এর বিমানবন্দরের কাছে বিমান রক্ষণাবেক্ষণ এলাকায়। এখানে থামার পর যাত্রীরা বিমানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলেছেন। হংকং ইউনিভার্সিটির স্লিপ রিসার্চ ক্লিনিক এবং ল্যাবরেটরির প্রধান তদন্তকারী ড. শার্লি লির মতে, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা এক ধরনের কন্ডিশনিং।

হংকংয়ের মানুষদের ঘুমানোর পর্যাপ্ত সময় নেই।’ ১৭ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ড্যানিয়েল ওয়াং বলেন, ‘মহামারীর পর আমাদের ভ্রমণ এবং ঘুমের জন্য এ দারুণ উদ্যোগ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + nine =