ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির লক্ষ্য এখন অনেকটাই চীন কেন্দ্রিক

নিউজ ডেস্ক :: সংবাদ প্রবাহ ::নয়াদিল্লি :: পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দূরপাল্লার আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) অগ্নি–৫ ভারতীয় বাহিনীর সামরিক ক্ষমতা ২০১৮–১৯ সালেই বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ তার ‘প্রকাশ্য সফল উৎক্ষেপণের ঘোষণার’ নেপথ্য কারণ কী? প্রশ্নটি আলোচনার পর্যায়ে উঠে এসেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ভূরাজনীতি ভারতের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা ও মনোযোগকে পাকিস্তানের দিক থেকে অনেকটাই সরিয়ে চীন সীমান্তে টেনে এনেছে। প্রস্তুতির বেশিরভাগ হয়ে উঠেছে চীনকেন্দ্রিক। অগ্নি–৫ উৎক্ষেপণের সফল ঘোষণাও সেই লক্ষ্যে।

চীনের সাম্প্রতিক কয়েকটি পদক্ষেপ ভারতকে বেশ সতর্ক করে তুলেছে। সেই কারণে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত মনোযোগের বেশিরভাগ আগে যেখানে ছিল পশ্চিমে, পাকিস্তানকেন্দ্রিক; এখন তা ক্রমশ চীন সীমান্তে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। বিশেষ করে পূর্ব লাদাখ ও ভুটান–তিব্বত লাগোয়া অরুণাচল সীমান্তে, যেখানে চীন ক্রমাগত ভারতীয় সেনাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

গত ২৩ অক্টোবর চীনের সংসদে নতুন স্থলসীমান্ত আইন পাস হওয়ার পর ভারত প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি সম্পর্কে নতুন ভাবনাচিন্তায় বাধ্য হয়েছে। লক্ষণীয়, ওই আইন রূপায়ণের আনুষ্ঠানিক বিরোধিতা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারত অগ্নি–৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের কথা ঘোষণা করে। পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় রয়েছে চীনের ভূখণ্ড।

চীনের অভিসন্ধির প্রতি ভারতের সন্দিহান হওয়ার প্রথম লক্ষণ ছিল দোকলাম। ২০১৭ সালের জুনে চীন–ভুটান–ভারত সীমান্তের দোকলামকে কেন্দ্র করে চীনের তৎপরতার পর থেকে প্রতি বছরই চীন সংলগ্ন সীমান্ত নিয়ে ভারতকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। দোকলামের পর ভারত–চীন সেনারা জড়িয়ে পরে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। ২০২০ সালের সেই সংঘাতের পর বারবার সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

চীন কিছুদিন পরপর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন দাবি জানিয়ে আসছে। অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় নেতাদের যাওয়া–আসাকে কেন্দ্র করে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়েছে দেশটি। সবচেয়ে বড় কথা, সেনাপর্যায়ে ১৩ দফা বৈঠক সত্ত্বেও পূর্ব লাদাখের বিবাদ অমীমাংসিত রেখেছে বেইজিং। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা ভারতকে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার রশদ জুগিয়েছে।

দুটি ঘটনাই ঘটেছে চলতি অক্টোবর মাসে। প্রথমটি মাসের মাঝামাঝি। এ সময় চীন ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য সমঝোতা চুক্তি সই করে। ভারতের সঙ্গে ভুটানের নিরাপত্তাসংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। এখন ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি করার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয় যে, ভারতকে বাদ দিয়ে চীন এখন ভুটানের সঙ্গে সরাসরি সীমান্তসংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে চাইছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *