নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: নয়াদিল্লি :: উত্তর প্রদেশে লখিমপুর খেরিতে গাড়িচাপায় কৃষক মৃত্যুর ঘটনায় সরকারি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কৃষকেরা। গতকাল শনিবার কৃষকনেতারা জানান, লখিমপুর খেরিতে যা ঘটেছে, তা জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে।
কৃষকনেতা যোগেন্দ্র যাদব, রাকেশ টিকায়েতসহ কয়েকজন কৃষকনেতা গতকাল দিল্লি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতা এবং স্বরাজ ইন্ডিয়ার প্রধান যোগেন্দ্র যাদব বলেন, ১২ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষকেরা লখিমপুর খেরিতে জড়ো হবেন। সেখান থেকে নিহত কৃষকদের চিতাভস্ম সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাবেন। ১৫ অক্টোবর দশেরার দিন তা বিসর্জন দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ওই দিন পোড়ানো হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কুশপুত্তলিকা।
সেখানে রাকেশ টিকায়েত বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে গাড়িচাপা দিয়ে চার কৃষককে মেরে ফেলার পর বিজেপির কর্মীদের যে গণপিটুনি দেওয়া হয়, তা ওই কাজের প্রতিক্রিয়া। এতে তিনি অন্যায় কিছু দেখছেন না। তাঁরা অপরাধীও নন। ওই ঘটনার পর মন্ত্রিপুত্রের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ যেমন দায়ের করা হয়, তেমনই বিজেপির নিহত কর্মীদের পরিবারের পক্ষ থেকেও কৃষকদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কৃষকনেতারা মন্ত্রী অজয় মিশ্রকে বরখাস্ত ও তাঁর পুত্র আশিসকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এদিকে আশিস মিশ্র শনিবার সকালে পুলিশি প্রহরায় লখিমপুর খেরিতে পুলিশের কাছে হাজিরা দেন। তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। খুনের অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তাঁকে কেন পুলিশি প্রহরা দেওয়া হবে, সেই প্রশ্ন শনিবার নতুন করে উঠলেও জেলা পুলিশ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। খুনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রীপুত্রকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬০ ধারায় সাক্ষী হিসেবে সমন জারি করা হয়। এ নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে উত্তর প্রদেশ রাজ্য পুলিশের গাফিলতির কড়া সমালোচনার পরও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি বলেছেন, প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। কারও চাপে পড়ে তিনি আইনের অপব্যবহার করবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর এ ঘোষণায় স্পষ্ট, আশিস মিশ্রকে গ্রেপ্তারের কোনো পরিকল্পনা রাজ্য পুলিশের নেই। মন্ত্রী অজয় মিশ্র শুরু থেকেই দাবি করছেন, গাড়িটি তাঁর হলেও তাঁর পুত্র ওই দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি গুলিও ছোড়েননি। রাজ্য পুলিশের তদন্তকারী দল অবশ্য ঘটনাস্থল থেকে দুটি ফাঁকা কার্তুজ উদ্ধার করেছে। যদিও রাজ্য সরকারের আইনজীবী হরিশ সালভে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে বলেছেন, কৃষকদের মৃতদেহের ময়নাতদন্তে গুলির আঘাত পাওয়া যায়নি। তাঁর মন্তব্য, গুলি যে–ই ছুড়ে থাকুন, তাঁর লক্ষ্য নির্ভুল ছিল না।