ঢাকা সফরে পশ্চিমবঙ্গকে কী বার্তা দিতে যাচ্ছেন মোদি?

আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদপ্রবাহ :: ১৯শে,মার্চ :: কলকাতা :: আসন্ন বাংলাদেশ সফরে এক ঢিলে একাধিক ফল লাভের লক্ষ্য রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রতিবেশী কূটনীতি যদি তার একটি দিক হয়, তাহলে অন্য দিকে ভোটের মুখে দাঁড়ানো পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক বার্তা দেয়া তার লক্ষ্য। সফরটি স্পষ্ট এ দু’ভাগে ভাগ হয়েছে।

প্রথম দিন ২৬ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মোদি যোগ দেবেন ভারত বাংলাদেশ শীর্ষ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে। বৈঠকে যে দিকটি বেশি গুরুত্ব পেতে চলেছে তা আঞ্চলিক সমন্বয় (অর্থনৈতিক)। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে সেতু রচনা করতে উৎসাহী ভারত।

বাণিজ্য এবং আর্থিক লেনদেন বাড়ানোটা মুখ্য লক্ষ্য, যাতে লাভবান হবে নয়াদিল্লি ও ঢাকা। এই সফরের পর দু’দেশের সীমান্তে রেল, সড়ক এবং বন্দর যোগাযোগ আরো অনেকটাই বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্ডার হাটের সংখ্যা বাড়িয়ে সীমান্তে বেআইনি বাণিজ্য এবং চোরাচালান বন্দের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে কথা হবে মোদি এবং হাসিনার। আলোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মডেলকে সামনে রেখে সামগ্রিক অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরো জমজমাট করার বিষয়টি উঠে আসবে।

দু’দেশের ৪১০০ কিলোমিটার সীমান্তের প্রায় ১ হাজার ৮৮০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো। মোদির ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিকে জোরদার করতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতি, পরিকাঠামোকেও শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ভারতের কাছে বাংলাদেশের সহায়তা জরুরি।

সম্প্রতি শেখ হাসিনার সাথে ভিডিওতে ফেনি নদীর ওপর সেতুর যৌথ উদ্বোধন করে দুই নেতাই বলেছেন, এর ফলে লাভবান হবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে এখন ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পূর্বে পণ্য পরিবহণ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রেল এবং সড়ক সংযোগ বাড়াতে আসন্ন বৈঠকে কথা হবে ‘বিবিআইএন’ অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল করিডরের কাজ দ্রুত শুরু করা নিয়েও। সফরের দ্বিতীয় অর্থাৎ শেষ দিনে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি দর্শনে যাবেন মোদি। কিন্তু সেদিন তার সফরের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের মন্দির দর্শন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেদিনই পশ্চিমবঙ্গে শুরু হচ্ছে আট দফা বিধানসভা ভোটের প্রথম পর্ব। ওইদিনই সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে পূজা দেবেন তিনি।

ফলে বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে একদিকে হিন্দুত্বের বার্তা দেয়া অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া ভোটারদের কাছে পৌঁছানো তার সফরের দ্বিতীয়ার্ধের লক্ষ্য। বনগাঁর সংসদ মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত শান্তনু ঠাকুর এক দিন আগেই পৌঁছে যাবেন ওড়াকান্দিতে। সাথে থাকবে তার কিছু নেতা ও কর্মী।

ওড়াকান্দি, সাতক্ষীরা সফর শেষে দিল্লির বিমান ধরার জন্য ঢাকায় না ফিরে বেনাপোল-পেট্রাপোল হয়ে সড়কপথে কলকাতায় ঢুকতে পারেন প্রধানমন্ত্রী- এমন কথাও একটি সূত্রে শোনা গিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সংযোগের একটি বিজ্ঞাপন হিসেবেও মোদির এই সড়কপথের যাত্রাকে তুলে ধরা হতে পারে। পাশাপাশি প্রচার না-করলেও রাজ্যে ভোটের প্রথম দিন মোদির উপস্থিতি রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট বার্তাবহ। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্যও করেননি বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *